মালদ্বীপে ‘হাইকমিশনার’ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

কূটনৈতিক প্রতিবদেক
০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৪
শেয়ার :
মালদ্বীপে ‘হাইকমিশনার’ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে তুরস্কে বসবাসরত তরুণ শিক্ষাবিদ ড. মো. নাজমুল ইসলামের নিয়োগ ঘিরে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। বয়স, অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক আনুগত্য ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এই নিয়োগকে ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হিসেবে দেখছেন পেশাদার কূটনীতিকরা। 

৩৩ বছর বয়সী ড. নাজমুল ইসলাম বর্তমানে আঙ্কারার ইলদিরিম বায়েজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং তুরস্ক থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করা এই শিক্ষাবিদ দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কে বসবাস করছেন। তিনি সেখানে দেশটির পার্লামেন্টে উপদেষ্টা হিসেবেও কর্মরত ছিলেন এবং তুর্কি নাগরিকের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ। যদিও নাজমুল জন্মসূত্রে নোয়াখালির বাসিন্দা।

এই প্রেক্ষাপটে তাকে রাষ্ট্রদূতের মতো স্পর্শকাতর পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক কূটনীতিকরা। তাদের মতে, এমন একটি পূর্ণাঙ্গ মিশনে- যেখানে ভারত-চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত-সেখানে অভিজ্ঞ কূটনীতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বিবেচনায় একজন প্রবাসী একাডেমিশিয়ানকে পাঠানো উচিত হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীর বিদেশি নাগরিক হওয়াও একটি নিরাপত্তাজনিত ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’। যদিও ড. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, তার স্ত্রী তুরস্কের সরকারি চাকরি ছাড়তে সম্মত হয়েছেন, তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ করবেন না। এই তথ্য আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তথ্যমতে, প্রথমে তাকে তুরস্কে রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির পর মালদ্বীপে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। 

জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে নাজমুল ইসলামকে দুই বছর মেয়াদে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আবুল হাসান মৃধার সই করা আরেক অফিস আদেশে নাজমুল ইসলামকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ন্যস্ত করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালে-তে হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অফিস আদেশে, বর্তমান দায়িত্বভার ত্যাগ করে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নতুন হাইকমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে। 

কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, পেশাদার কূটনীতিকদের অন্তত ২০ বছরের অভিজ্ঞতার পর রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পেতে হয়। অথচ নাজমুল ইসলাম এর ধারেকাছেও নন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত বিশেষ বিবেচনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মান বা অনেকক্ষেত্রে পুরস্কার হিসেবে রাষ্টদূত পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। নাজমুল কি বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। এই বাস্তবতায় নিয়োগের পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের এক প্রভাবশালী উপদেষ্টার ভূমিকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স কোনো বাধা না হলেও অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ততা গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, রাষ্ট্রদূত যেন বিদেশে দেশের সম্মান রক্ষা করতে পারেন- সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করাই উচিত। শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রদান হলে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মালদ্বীপে আগে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে এখন সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টান্ত গড়লেন নাজমুল ইসলাম, যা কূটনৈতিক প্রথার বাইরে এক অস্বাভাবিক নজির বলেই মনে করছেন পেশাদার কূটনৈতিক মহল।