পুলিশকে দেওয়া হবে আচরণগত প্রশিক্ষণ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে পুলিশের দেড় লাখ সদস্যকে আচরণগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য আচরণগত গাইডলাইন তৈরি করছে পুলিশ সদর দপ্তর যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কোনো সদস্য এ গাইডলাইন লঙ্ঘন করলে কিংবা অপেশাদার আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশিক্ষণকালে এ বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে চরম বিতর্কিত হয়ে পড়ে পুলিশ বাহিনী। আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে পুলিশ বাহিনীর সেই কলঙ্কমোচনের নির্বাচন। পুলিশের প্রশিক্ষণকালে বিষয়টি বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের তাগিদ দেওয়া হবে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আচরণগত গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবেন। এ ছাড়া বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনায় মক ভোটের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র, ভোটারদের নিরাপত্তা, ব্যালট বাক্স আনা-নেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ধাপে ধাপে পুলিশের কী ধরনের ভূমিকা নিতে হবে, এই মক টেস্টের মাধ্যমে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে একটি মক ভোটকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এরপর সেখানে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্র দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হলে কীভাবে তা মোকাবিলা করা হবে এ বিষয়টিও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে কীভাবে পুলিশ অন্যান্য বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবে, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, ভোট গ্রহণের পূর্বে, ভোট গ্রহণকালে এবং ভোটের পর পুলিশকে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে প্রশিক্ষণে এসব বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। ভোট প্রদানকালে কোনো পক্ষ ভোটারদের বাধা দিলে, ভোটদানে নিরুৎসাহিত করলে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তাও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এইচ এম শাহাদাত হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে পুলিশ। এ ব্যাপারে আমরা তৈরি হচ্ছি। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই অংশ হিসেবে আগামী মাসে শুরু হচ্ছে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের বিশেষ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার ঘটনায় পুলিশকে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। এমন প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কাজে পুলিশ যেন না জড়ায়, সে বিষয়ে আইজিপির কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সামনে যে নির্বাচনই হোক, পুলিশ সেই নির্বাচনে বিতর্কিত কোনো ভূমিকায় জড়াবে না। বিশেষ নির্বাচনী প্রশিক্ষণে এ বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে স্মরণ করে দেওয়া হবে মাঠপুলিশকে।