খানাখন্দে ভরা ঢাকার রাস্তা, দুর্ভোগে নগরবাসী
অতি বৃষ্টিকে দায়ী করছে দুই সিটি
হাতিরঝিলের মধুবাগ থেকে পশ্চিম রামপুরার ডিআইটি রোডে সংস্কার কাজ চলছে প্রায় তিন মাস ধরে। রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তার এমন দশা, হেঁটে চললেও গর্তে পড়ার শঙ্কা কাজ করে। মধুবাগ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সংস্কার কাজ শুরু করলেও কাজের গতি ও মান এতটাই খারাপ যে, এক দিকে শেষ হয় অন্যদিকে ক্ষত বের হয়। একই অবস্থা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জিগাতলা, হাজারীবাগসহ অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন রাস্তার। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। তা ছাড়া মেয়র কাউন্সিলর না থাকায় মহল্লার রাস্তাগুলো কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না বলে এবার রাস্তা বেশি বেহাল হয়েছে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, সংস্কার কাজ চলমান। এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় রাস্তা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণের পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ। যেটুকু কাজ চলছে সেটাও মান সম্মত না হওয়ায় টিকছে না। তবে প্রধান সড়কগুলোতে সংস্কার চললেও গলির ভেতর দেখেন না সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিএসটিআইয়ের সামনের সড়কটি মাস খানেক আগে একবার সংস্কার করা হলেও পুনরায় বিশাল বিশাল গর্তে পরিণত হয়েছে। রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় এই রাস্তায় অফিস সময়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মগবাজার রেলগেটের সামনে খানাখন্দে ভরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, বিগত সময়ে কাজের মানগুলো খুবই খারাপ ছিল। তাই এবার বৃষ্টির সঙ্গে ক্ষত বের হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া আগে কাউন্সিলর ছিল, তারা নিজ ওয়ার্ডের ভাঙা রাস্তাগুলো সংস্কারের পরিকল্পনা করত এবং কাজ হতো। এখন জনপ্রতিনিধি না থাকায় কর্মকর্তারা গলি বা মহল্লার রাস্তার দিকে নজর দিতে পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একাংশে কাজ হলেও অন্য অংশে এখনও ক্ষত রয়ে গেছে। শেখেরটেক-৬ নম্বর রোডের শ্যামলী হাউজিং এলাকায় কাজ চলমান। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে থাকায় এই এলাকার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ওপারে ঢাকা উদ্যানের প্রধান সড়কটি গ্রামের রাস্তার চাইতেও খারাপ। ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যানসহ বেড়িবাঁধের ওপারের আবাসিক এলাকাগুলো উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হলেও সেখানে এখনও সিটি করপোরেশনের সেবা সেভাবে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
খারাপ রাস্তার মধ্যে আরও রয়েছে তেজগাঁও মেয়র আনিসুল হক সড়ক, রামপুরা কাঁচাবাজারের সামনের প্রধান সড়ক, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, মাজার রোড, আদাবর গৈদের টেক সড়ক, মনসুরাবাদ, রাজিয়া সুলতানা রোডসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ রাস্তা।
রাস্তার ভাঙাচোরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আমাদের সময়কে বলেন, সংস্কার কাজ চলছে। কোথাও কোনো রাস্তা ভাঙা থাকলে আমাদের তালিকা দিলে ঠিক করে দেব। আমাকে তালিকা দেন আমি লোক পাঠিয়ে ঠিক করে দেব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তার অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। কাঁটাবন সড়কের বিভিন্ন জায়গা থেকে পিচ ঢালাই উঠে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুনবাগিচা, ৩৬ পুরানা পল্টনের রাস্তা, খিলগাঁও, বাসাবো এলাকার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। পুরান ঢাকার অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা বলে জানিয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। হাজারীবাগ, কাদেরাবাদ, রায়েরবাজার, যাত্রবাড়ী সড়কের অবস্থাও খারাপ। বঙ্গভবনের পেছনের হাটখোলা সড়ক, সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে সংযোগ সড়ক, গোপীবাগ এলাকার সড়কসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তা গর্তে ভরে গেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে সেগুলো অধিকাংশ প্রধান প্রধান সড়ককে কেন্দ্র করে। গলির ভেতরে বা মহল্লার রাস্তাগুলোর দিকে দুই সিটির নজর নেই। বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রতিনিধি না থাকাতে মহল্লা বা গলির রাস্তাগুলোর দিকে নজর কম। কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগহ করেন না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, সংস্কার কাজ চলমান। এবার বৃষ্টি বেশি হওয়াতে খানাখন্দও বেশি। বৃষ্টি থামলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।