জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ নাগরিকের

অনলাইন ডেস্ক
০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৩
শেয়ার :
জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ নাগরিকের

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল ছিল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, উচ্ছেদের মুখে যখন স্বাধীনতাকামী মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়; তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলীয়ভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, লুটপাটে সহযোগী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশে জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে বাঙালি মুসলমান তার নিজস্ব ভূখণ্ড বেছে নিতে বাধ্য হয়। তবে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির অর্থনৈতিক শোষণ, বর্ণবাদী নীপিড়ন, অত্যাচার, গণহত্যা, মনাবাধিকার হরণের মুখে আবারো স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বর্বর গণহত্যা ও এথনিক ক্লিনজিংয়ের মুখে নিজেদের অসীম সাহস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক রক্ত, মৃত্যু, সম্ভ্রম, ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কায়েম করে। 

ইতিহাসে দেখা গেছে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী অখণ্ড পাকিস্তানের দাবিতে সভা-সমাবেশ করেছে, প্রচার চালিয়েছে। এমনকি ২৫ মার্চ বর্বর গণহত্যার পর পাকিস্তান জান্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা। তাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে রাজাকার, আলবদরসহ বিভিন্ন বাহিনিতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে বলে পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। তবে তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী একই নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে তারা কখনো ক্ষমা প্রার্থণা, অনুশোচনার প্রকাশ ঘটায়নি। উল্টো বিভিন্ন ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চলিয়েছে। 

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়তের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় তখন তাদের বিচার হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এসব মামলার রায়ে জবরদস্তিমূলক ভাবে কারো ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সেই অভিযোগ বিবেচনায়, এসব মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পুনর্বিচার জরুরি। এটা সবাই জানে যে, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত অপরাধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। রাজনৈতিক মহলে এটাও প্রতিষ্ঠিত যে, একই সময়ে শাহবাগে জমায়েত তৈরি করে গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামী লীগের কতৃত্ববাদী শাসনের ভিত তৈরি করেছিল। এসব অভিযোগেরও যথাযথ তদন্ত এবং বিচার জরুরি। 

আমরা মনে করি, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত ছিলো সেটা ঠিক। তবে তার মানে এই নয় যে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত বা এ দলের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে মানবাতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল না। 

আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হওয়া জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ছিল। মহান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন উচ্ছেদ করেছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়েও কেউ প্রশ্ন করেনি। তবে সফল অভ্যুত্থানের পর থেকে জামায়াত এবং তার সহযোগী ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা, গণহত্যাসহ অন্যান্য অভিযোগে ঐতিহাসিকভাবে অভিযুক্তদের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছে। পাকিস্তানি শাসকরা তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় যে ভাষায় কথা বলত, সেই একই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আওয়ামী লীগের মতো ‘শাহবাগী’ ইত্যাদি ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ফিরিয় আনছে।

তাদের এ ধরনের উদ্দেশ্য, তৎপরতা ইতিহাসের সঙ্গে বেইমানি, রাজনৈতিক অসততা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রকাশ্যে ও সংগঠিতভাবে জনগণের মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করার পরও কোনো রাজনৈতিক দল অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই অবাধে রাজনীতি করছে এমন নজির চোখে পড়ে না। শুধু তাই নয় জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গণমানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান আমলের বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালাচ্ছে জামায়াত। তাদের এ চর্চা জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়। 

আমরা জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর কাছে এ ধারার রাজনীতি বন্ধের দাবি জানাই। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার রাজনৈতিক দায় শিকারের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েক লাখ মানুষের শহীদি আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রমের প্রতি অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। 

বিবৃতিদাতারা হলেন:

আজফার হোসেন, অধ্যাপক, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিট

রায়হান রাইন, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জি এইচ হাবীব; সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আ-আল মামুন; শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সায়মা আলম; শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আর রাজী; শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সায়েমা খাতুন, প্রবাসী লেখক ও নৃবিজ্ঞানী

কাজল শাহনেওয়াজ, কবি ও কথাসাহিত্যিক

ড. মারুফ মল্লিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

রাখাল রাহা, লেখক ও সম্পাদক

সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

গোলাম সরওয়ার, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দেবাশীষ চক্রবর্তী, শিল্পী

আশফাক নিপুন, নির্মাতা

মোস্তফা কামাল পলাশ, আবহওয়াবিদ

মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন; কথাসাহিত্যক, প্রকাশক

গাজী তানজিয়া, কথাসাহিত্যিক

এসকে তাসনিম আফরোজ ইমি, অ্যাক্টিভিস্ট

তুহিন খান, বুদ্ধিজীবী

পারভেজ আলম, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট 

চিনু কবির, কবি ও সংগঠক

ফেরদৌস আরা রুমী, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট

বিথী ঘোষ, শিল্পী

মোহাম্মদ রোমেল, ফিল্মমেকার, কবি ও সংগঠক

সাঈদ বারী, প্রকাশক

মাহাবুব রাহমান, প্রকাশক

সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

অর্বাক আদিত্য, কবি ও সাংবাদিক

আরিফ রহমান; লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

সোয়েব মাহমুদ, কবি

অস্ট্রিক আর্যু লেখক, অনুবাদক

সাদিক মাহবুব ইসলাম, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট