থামছে না স্বজনদের আহাজারি, চালককে গ্রেপ্তারের দাবি
নোয়াখালীতে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে লক্ষ্মীপুরের একই পরিবারের ৭ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় পলাতক চালককে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফেরা আব্দুর রহিমসহ নিহতদের স্বজনরা এ দাবি জানান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় নিহতদের বাড়িতে গেলে স্বজনদেরকে আহাজারি করতে দেখা যায়। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে লিপি আক্তার নামে একজনকে কান্না করতে করতে আদরের ছোট বোন ও ভাগ্নিকে ডাকাডাকি করতে দেখা যায়। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না স্বজনদের আহাজারি।
আব্দুর রহিম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, তিন নাতনি ও দুই পুত্রবধূ পানিতে ডুবে মারা গেছেন। চালক ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে তিনি আমাদেরকে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় রেখে পালিয়ে গেছেন। আমরা কয়েকজন বের হতে পেরেছি। চেষ্টা করেও অন্যদেরকে বের করতে পারিনি। চালককে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে বিদেশ থেকে আজ আসবে। তারা এলে এ ঘটনায় মামলা করব। কোনোভাবেই চালককে ছাড় দেওয়া হবে না।’ দ্রুত তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
বেঁচে ফেরা বাহার, আব্দুর রহিম ও ইস্কান্দার মির্জা জানান, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে গত মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট রাতে পরিবারের ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বাহারকে নিয়ে ফেরার পথে গতকাল বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের অদূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিক গাড়িটি ডুবে যায়নি। নৌকার মতো ভেসে ছিল। ধীরে ধীরে গাড়িটি ডুবে যায়। এ সময় গাড়ির লক খুলে দিতে বললেও চালক রাসেল তা করেননি। তিনি নিজে গাড়ির দরজার কাঁচ নামিয়ে বের হয়ে গেছেন। গাড়িতে আটকে থাকা কাউকেই উদ্ধারের চেষ্টা না করে তিনি পালিয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন বের হয়ে আসেন।
নিহত হন প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮), মা মোরশেদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০) ও ভাবি লাবনী আক্তার (২৫)।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবে। এজন্য আমরা করিনি। পরিবার মামলা না করলে আমরা করব। ঘটনার পর থেকেই চালক পলাতক। তাকে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে একসঙ্গে জানাজার নামাজ শেষে নিহতদের ৬ জনকে চৌপল্লী কাশারি বাড়ির কবরস্থানে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধা ফয়জুন নেছার মরদেহ তার বাড়ি হাজিরপাড়া গ্রামে নিয়ে কবর দেওয়া হয়।