গাজা দখলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসরায়েল: ট্রাম্প
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল যদি এগোয়, তাতে বাধা দেবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা দখলে নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি ইসরায়েলের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকেরা জানতে চান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি এখন গাজার মানুষের ‘খাবারের ব্যবস্থা’ নিয়ে বেশি মনোযোগী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাকিটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। এটা মূলত ইসরায়েলের বিষয়।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় নজিরবিহীন ও নৃশংস তাণ্ডব শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে প্রতিবছর দেওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা আরও বাড়িয়েছে।
ইসরায়েল গাজার অধিকাংশ অংশকে সামরিক এলাকা ঘোষণা করে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে এনে সীমিত কিছু জায়গায় গাদাগাদি করে রেখেছে। ফলে এ উপত্যকার প্রায় ৮৬ শতাংশই এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
তবে অবশিষ্ট যেসব এলাকায় এখনো সামরিক অভিযান হয়নি, সেখানেও সেনা অভিযান চালালে ফিলিস্তিনিদের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়বে। কারণ, প্রতিদিন বোমা হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেন।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখলের যে পরিকল্পনা করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাতে হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর হাতে আটক ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনচা গতকাল সতর্ক করে বলেন, গাজা পুরোপুরি দখলে নেওয়ার মতো পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জেনচা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন এ বিষয়ে স্পষ্ট। গাজা একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সেটি এমনই থাকতে হবে।
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের সেনা ও বসতি তুলে নেয়। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল গাজার আকাশপথ, উপকূলীয় জলসীমা ও প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করায় অঞ্চলটি তখনো ‘কার্যত দখলাধীন’ অবস্থায় ছিল।
২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই উগ্রপন্থী ইসরায়েলি নেতারা গাজায় আবার সামরিক ঘাঁটি ও বসতি গড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দিতে চায়। তার এ পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের শামিল। এ পরিকল্পনাকে গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প নিজেও সমর্থন করেছিলেন।তখন ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, গাজা খালি করে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ (সৈকতের অবকাশ শহর) তৈরি করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
গাজায় আরও বড় পরিসরে সেনা অভিযান চালাতে চায় ইসরায়েল-সম্প্রতি এমন খবরে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, গাজায় এখন নিহত মানুষের সঙ্গে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তীব্র খাদ্যসংকট ছড়িয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত সংস্থা গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত কিছু কেন্দ্রই এখন ফিলিস্তিনিদের খাদ্যের একমাত্র উৎস।
নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দিতে চায়। এ পরিকল্পনাকে গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প নিজেও সমর্থন করেছিলেন। তখন ট্রাম্প প্রস্তাব দেন, গাজা খালি করে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ (সৈকতের অবকাশ শহর) তৈরি করা যেতে পারে।
তবে বিতর্কিত সংস্থাটির কেন্দ্রগুলোর দিকে খাবার আনতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এ সংস্থাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও জাতিসংঘকে সহায়তা বিতরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী আহ্বান চলছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল কিছু খাদ্যবাহী ট্রাক ও আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। তবে এখনো এসব সহায়তা গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
উত্তর গাজায় জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোর বাইরেও ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।গতকাল ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক সহায়তা হিসেবে ছয় কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে তিন কোটি ডলার গেছে জিএইচএফের তহবিলে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি গাজায় ছয় কোটি ডলার দিয়েছে। এতে প্রচুর খাবার পাঠানো হয়েছে। বাস্তবে অনেক খাবারই পাঠানো হয়েছে। কারণ, গাজার মানুষ খাবারের দিক দিয়ে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, ইসরায়েল এ সহায়তা বিতরণে আমাদের সাহায্য করবে। অর্থের দিক থেকেও সাহায্য করবে। আমাদের সঙ্গে আরব দেশগুলোও আছে। তারাও অর্থ দিয়ে ও সম্ভবত বিতরণেও আমাদের সাহায্য করবে।’
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় যা ঘটছে, তা গণহত্যার শামিল।