‘নেতারা শুধু তালিকা নিচ্ছে, ত্রাণ-সহায়তা কিছুই দিচ্ছে না’

হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩০
শেয়ার :
‘নেতারা শুধু তালিকা নিচ্ছে, ত্রাণ-সহায়তা কিছুই দিচ্ছে না’

উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টির কারণে ভারতের উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক লেকে ফাটল ধরে পানির চাপ বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তার পানি। যদিও আজ সোমবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। কিন্তু তারপরও ভোগান্তি বেড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলোর।

আজ সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল ৫২ দশমিক ৬ মিটার। যা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে গতকাল রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের উজানে ভারি বর্ষণের ফলে নদীতে পানির প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। রাতে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়কপথ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এখন নৌকা ও ভেলা হয়ে উঠেছে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১৩২ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

এদিকে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন।

পানি কমলেও চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট। এতে চরম বিপাকে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি চরের সাজু ইসলাম বলেন, ‘গতকাল রবিবার থেকে পানি বাড়তে বাড়তে রাতে ঘরেই ঢুকে গেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছি। কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি লোক খোঁজও নেয়নি। আমরা কি স্থায়ী সমাধান কখনোই পাব না?’

কালীগঞ্জ উপজেলার চর ভোটমারী এলাকার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সারারাত পানি ঢুকেছে। রান্না-বান্না বন্ধ। কেউ দেখতেও আসছে না। বাচ্চারা স্কুলেও যেতে পারছে না। রাজনৈতিক নেতারা শুধু তালিকা নিচ্ছে, ত্রাণ বা সহায়তা কিছুই দিচ্ছে না।’

এ বিষয়ে পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, ‘গতকাল রবিবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও নিম্নাঞ্চলে সতর্কতা জারি রয়েছে। আগামী দুই থেতে তিন দিন এই পরিস্থিতি থাকতে পারে। তবে পানি আর বাড়বে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’