ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়ায় রূপান্তর করে চলছে চাঁদাবাজি
নেত্রকোনার বারহাট্টায় শিক্ষিত তরুণদের প্রলোভন দেখিয়ে কথিত অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গসহ অণ্ডকোষ কেটে হিজড়ায় রূপান্তর করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পরিবার ও সমাজচ্যুত এসব তরুণদের রাস্তার মোড়, রেলস্টেশনসহ সর্বত্র করানো হচ্ছে চাঁদাবাজি। এদের মধ্যে কেউ কেউ চাঁদাবাজি না করতে চাইলে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে নেত্রকোনা জেলা শহরে থাকা তাজু ওরফে লতা, সানিপ ওরফে কমলা, মেহেদী আক্তার সানা ওরফে স্বর্ণা। লতা, কমলা ও স্বর্ণার বিরুদ্ধে প্রশাসনও নীরব এমনটাই দাবি ভুক্তভোগীদের।
বারহাট্টা উপজেলার দায়িত্বে থাকা ভুক্তভোগী নয়ন ওরফে অন্তরা হিজরা বলেন, 'আমি পুরুষ ছিলাম। বিয়ে করেছিলাম। আমার একটা ছেলেও আছে। কিন্তু সামাজিকতার খাতিরে একজন হিজড়ার সাথে আমার পরিচয় ছিল। সেই হিজড়ার মাধ্যমে আমার লতা হিজড়ার সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা বেড়ানোর কথা বলে আমাকে নেত্রকোনার মদনে স্বর্ণা হিজড়ার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে ভালো খাবার খাওয়ানো হয়। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি বুঝতে পারি যে আমার পুরুষাঙ্গসহ অণ্ডকোষ কেটে ফেলা হয়েছে। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আমি এটার প্রতিবাদ করি।কিন্তু তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আমাকে আমার বাড়ি বারহাট্টার স্বল্প দশালে ফেলে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'পরবর্তীতে আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন আমার জীবন শেষ। লতা হিজড়া আমার জীবন কঠিন করে তুলেছে। লতাকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আমি এত টাকা কোথায় পাব। আমি কোনো চাঁদাবাজি করতে চাই না। আমার ছেলেটা ময়মনসিংহ মিন্টু কলেজে পড়ে। তাকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই।'
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ভুক্তভোগী মালতি ওরফে সুমন বলেন, 'আমি এইচএসসি পাশ করার পর লতা হিজড়ার সাথে পরিচয় হয়। আমাকে প্রলোভন দেখিয়ে লতা ও স্বর্ণা হিজড়া বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতো। হঠাৎ একদিন আমাকে মদনে স্বর্ণা হিজড়ার বাসায় নিয়ে যায়। সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই আমাদের গোপনাঙ্গ কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নাক ও কান ফোঁড়ানো হয়েছে।তারপর আমার পরিবার আমাকে বের করে দিলে আমি বারহাট্টার নয়নের কাছে এসে আশ্রয় নেই। এখানে এসেও শান্তি নাই। আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে চাঁদাবাজির জন্য। আমি চাঁদাবাজি করতে চাই না। আমি শান্তিতে বাঁচতে চাই।'
জোরপূর্বক পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ কেটে হিজড়ায় রূপান্তরের বিষয়ে জানতে নেত্রকোনা জেলার প্রধান হিজড়ার দায়িত্বে থাকা লতার মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও ফোন রিসিভ হয়নি। পুরুষাঙ্গ কাটার মত ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন নিজ হাতে করা স্বর্ণা হিজড়া ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক শুনেই ফোন কেটে দেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান জানান, পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়ায় রূপান্তর করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। আসলে তদন্তপূর্বক এই চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করানো হচ্ছে এই বিষয়টা নিয়েও যদি ওরা অভিযোগ করে সত্যতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।