গুলশানে চাঁদাবাজির মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে অপু
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে এক সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আজ শনিবার ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার এই রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, এ আসামিসহ এই মামলার আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তারা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এ মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের এরকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগীসহ আরও কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করেছেন মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়।
এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামিদের ও তাদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
শুনানিকাল অপুর আইনজীবী মো. শাহ আলমের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষে আসামি অপু বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং (আমি কিছু বলতে চাই)।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আপনার আইনজীবীরা যা বলল তার সাথে কি আপনি একমত? নাকি এর বাইরে কিছু বলার আছে?’ তখন অপু বলেন, ‘আরও বলতে চাই।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এ মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনে মধ্যে রিয়াদ বাদে বাকি চারজন জড়িত না। আমিও জড়িত নই। রিয়াদ বিপদে পড়েছে বলে আমাদেরকে জানায়। রিয়াদ বলেছিল, তোরা দ্রুত আয়। আমরা সবাই গিয়ে ফেঁসে গেছি।’
শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এ আগে শুক্রবার ঢাকার ওয়ারী থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এ মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেনের ২৭ জুলাই সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওইদিন আরেক আসামি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মি আহমেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণাংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও তার ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেন। এ ঘটনার পর গত ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আসামি রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় স্বজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে জানালে আসামিরা চলে যান।
পরবর্তীতে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় আসামি রিয়াদের নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে এবং ওই সময় এজাহারনামীয় আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান।