সেনাসদস্যের বাড়িতে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
০২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৬
শেয়ার :
সেনাসদস্যের বাড়িতে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাতের অন্ধকারে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার দিকে জেলা শহরের স্বরূপনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত যুবক সোহেল রানা (২৩) নয়াগোলা এলাকার মৃত শরিফুল ইসলামের ছেলে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি পলিটেকনিকের ছাত্র। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য লিয়াকত আলীর বাড়িতে কলিং বেল চেপে ওই বাড়িতে বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন অভিযোগে প্রবেশ করেন আটককৃত সোহেলসহ ৪ যুবক। বাড়ির দরজা খোলামাত্র তারা বাড়িতে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেন এবং বাড়ির নারীদের মারধর করে দুজনের গলায় থাকা দুটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচিতে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সোহেলকে আটক করে গণধোলাই দেন। এ সময় সোহেলের সহযোগী আরও ৩ জন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় যুবকদের মারধরে আহত ওই বাড়ির দুই নারীকে জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। 

এলাকাবাসী জানান, তারা মূলত বাল্যবিয়ের অজুহাতে (যদিও বিয়ে হয়নি) চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যেই এই অপ্রীতিকর আচরণ করেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বাল্যবিয়ে যদি থামাতেই হয় বা কোনো ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে তারা এত রাতে কেন আসবেন? আর এলেও তারা প্রশাসনের সাহায্য ছাড়াই বা তাদের না জানিয়ে কেন আসবেন? 

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য লিয়াকত আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার মেয়েকে ছেলে পক্ষের লোকজন দেখতে আসেন। কিন্তু আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি বলে পাত্রপক্ষকে বলে দেন যে আমাদের পক্ষে এই বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। পরে গভীর রাতে কয়েকজন যুবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়ে বাল্যবিয়ের কথা বলে চাঁদা দাবি করলে আমার সন্দেহ হয়। পরে তারা জোর করে বাড়িতে ঢুকে এই অপ্রীতিকর আচরণ করেন।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম বলেন, ‘আটককৃত সোহেল রানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটিতে ছিলেন না। তবে তিনি জুলাই যোদ্ধা ছিলেন এবং আন্দোলনের সময় কারাগারেও গিয়েছিলেন। দেশকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলাম। তাই কেউ যদি জুলাই বিপ্লববের নাম করে অথবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলননের সদস্য পরিচয়ে কোনো অপকর্মে লিপ্ত হন, তবে তার শাস্তির দাবি করছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘সোহেল একটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে চাঁদা দাবির ঘটনায় আটক হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চাই এবং তিনি যদি এ ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে তার কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ওই সেনা সদস্য ঘটনা বাড়িয়ে বলছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের কথা বলে বাড়িতে ঢুকে চাঁদা দাবির ঘটনায় একটি এজাহার পাওয়া গেছে। ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের বউ বিথি বেগম ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এই এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’ 

উল্লেখ্য, এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার শরিফুল ইসলামের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ জানানো হয়েছিল এই সোহেলের বিরুদ্ধে।