দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ, ১৯ সিদ্ধান্তের ৯টিতে ভিন্নমত

অনলাইন ডেস্ক
০১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৪
শেয়ার :
দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ, ১৯ সিদ্ধান্তের ৯টিতে ভিন্নমত

রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ৩০ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তির নোট) দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপিসহ একাধিক দল।

জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রতিষ্ঠানে বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া, সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। তবে এ দুটিসহ সাতটি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শেষ দিন ছিল গতকাল। গত ৩ জুন থেকে শুরু করে মোট ২৩ দিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে কমিশন। এই সময়ে মৌলিক সংস্কারের ১৯টি প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অন্তত নয়টি বিষয়ের সিদ্ধান্তে একাধিক দলের ভিন্নমত রয়েছে।

এসব ভিন্নমত জুলাই জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে। দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা গতকাল শেষ হলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। শিগগির এটি চূড়ান্ত করার পর সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এরপর তা দলগুলোকে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।

গতকাল শেষ দিনের আলোচনায় যে সাতটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো হচ্ছে চার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, উচ্চকক্ষ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ও সংবিধানের মূলনীতি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও মৌলিক অধিকার ছাড়া অন্য পাঁচটি বিষয়ে একাধিক দলের ‘ভিন্নমত’ আছে। সংবিধানের মূলনীতি ছাড়া বাকি চারটি প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়, সে জন্য সংবিধানে যেসব মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তার দুটি ছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতির বদল এবং পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন। কমিশনের এ দুটি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি।

এ ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়, তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধানসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে না।

তবে শেষ পর্যন্ত তিন বাহিনীর প্রধানসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। তিন বাহিনী প্রধানের নিয়োগ নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখার পক্ষে মত দেয় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল। পরে অন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ ক্ষেত্রেও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ভিন্নমত দেয় বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশন যে রূপরেখা প্রস্তাব করেছে, তার তিনটি ক্ষেত্রে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে।