শেষশ্রদ্ধায় নিউ জার্সিতে চিরনিদ্রায় এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল

প্রবাস ডেস্ক
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩১
শেয়ার :
শেষশ্রদ্ধায় নিউ জার্সিতে চিরনিদ্রায় এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা দিদারুল

শেষ বিদায় জানানো হয়েছে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট-এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা বাংলাদেশি অফিসার দিদারুল ইসলামকে। তার জানাজা হয়েছে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদে। জোহরের নামাজের পর জানাজায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

জানাজায় যোগ দিয়ে নিউ ইয়র্কের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে জীবন দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

দিদারুলের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে মরণোত্তর ডিডেকটিভ ফার্স্ট গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার ঘোষণা দেয় এনওয়াইপিডি।

জানাজায় যোগ দিয়ে সবার কাছে দোয়া চান দিদারুলের স্ত্রী।

দীর্ঘদিন যে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন এ পুলিশ কর্মকর্তা, সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় তার শেষ নামাজ। মসজিদের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ জানাজায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সিটির বাইরে থেকেও আসেন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী।

ওই সময় দিদারুলের বৃদ্ধ বাবাকে সমবেদনা জানান গভর্নর ক্যাথি হোকুল।

জানাজা পূর্ববর্তী বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে আজ যে শোক বিরাজ করছে, তা তার আরেক পরিবার এনওয়াইপিডির সদস্যদের মধ্যেও কাজ করছে।

মেয়র এরিক অ্যাডামস দিদারুলের পরিবারের সদস্যদের সবসময় সহায়তা করার আশ্বাস দেন।

বক্তৃতা দেওয়ার সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশ।

তিনি বলেন, নিজের জীবন দিয়ে শুধু মানুষের নিরাপত্তা নয়, নিজের দুই সন্তান ও অনাগত সন্তানের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গেলেন দিদারুল।

দিদারুলের অকাল প্রয়াণে তার তৃতীয় সন্তান সম্ভবা স্ত্রী জানান, স্বামীর প্রাণহানিতে তার হৃদয় ভেঙে গেলেও তিনি এ ভেবে গর্বিত যে, এর বিনিময়ে সেদিন অনেক মানুষ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পেরেছেন।

মসজিদের ভেতর অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন ড. জাকির আহমেদ।

বাংলাদেশি এ কর্মকর্তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এনওয়াইপিডিসহ নিউ ইয়র্ক সিটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। তারা উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেছেন দিদারুলের।

মরণোত্তর এ পদোন্নতির বিষয়ে এনওয়াইপিডি বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়।

এতে জানানো হয়, নগর রক্ষায় স্বর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন দিদারুল। আজ ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেডে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ।

এনওয়াইপিডির পোস্টে বলা হয়, দিদারুলকে সবসময় মনে রাখা হবে। এনওয়াইপিডির প্রতিটি কর্মকর্তার হৃদয়ে বেঁচে থাকবে ডিটেকটিভ দিদারুলের পরম্পরা।

নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ কর্মকর্তাসহ নগরের কর্মকর্তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার দিদারুলের জানাজা সম্পন্ন হয়। তার দাফন হয় নিউ জার্সির টটোয়ার একটি বেসরকারি কবরস্থানে।

দাফনের আগে দিদারুলকে ডিটেকটিভ বা গোয়েন্দা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

নিউ ইয়র্কে দিদারুলের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় স্কুল সেইফটি এজেন্ট হিসেবে। তিনি পরবর্তী সময়ে পেট্রল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পান।

নিবেদিত পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ৩৬ বছর বয়সী দিদারুলকে স্মরণ করেছেন সহকর্মীসহ অনেকে।

কয়েক সপ্তাহ পরই তৃতীয় সন্তানের বাবা হওয়ার কথা ছিল তার, কিন্তু তার আগেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, দুই সন্তান, স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে বন্দুক হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে।