তারেক রহমানের এক দফার ডাক সমন্বয়কদের মুক্তি

নজরুল ইসলাম
০১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
তারেক রহমানের এক দফার ডাক সমন্বয়কদের মুক্তি

গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চার দিন আগে ১ আগস্ট (আন্দোলনকারীদের ভাষায় ৩২ জুলাই) ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একদফা ডাক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘দফা এক দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একজন গ্রেপ্তার হলে আরেকজন দায়িত্ব নেবেন, নেতৃত্ব দেবেন। কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনা সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলে সামাজিক মাধ্যমের বদৌলতে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।’

এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ১৬ জুলাই সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে জুলাই গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর ২১ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। আন্দোলনকারীরা তখন জানান, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস চলতেই থাকবে। ফলে তারা ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই, ২ আগস্টকে ৩৩ জুলাই হিসেবে গণনা শুরু করেন।

এই দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে এসব কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক স্থানে শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

এই দিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তারকৃত সবার জন্য ২ আগস্ট ‘দেশব্যাপী প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২ আগস্ট জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করাসহ ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের গণমিছিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

এই দিন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কে মুক্তি দেওয়া হয়। ১ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে তারা ডিবি কার্যালয় থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে যান।

এদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকালে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে’ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়।

এই দিন সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। লিখিত বক্তব্যে তারা শিক্ষার্থীদের দাবির কাক্সিক্ষত সমাধান হওয়ায় তাদের আন্দোলন পরিহারের আহ্বান জানান। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদসহ সব হত্যাকা-ের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

অন্য দিকে, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি, হামলা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশি আমেরিকানরা। তারা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানান। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ জানায়, আন্দোলনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকের এ কথা জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়- সরকার যে অন্যায় করছে, এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত প্রাণহানি, সহিংসতা, নাশকতা, ক্ষয়ক্ষতি ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।