বাঁশ-রশি দিয়ে হল নির্মাণ, ছাদ ধসে আহত ১১

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা
৩১ জুলাই ২০২৫, ২২:১৫
শেয়ার :
বাঁশ-রশি দিয়ে হল নির্মাণ, ছাদ ধসে আহত ১১

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০তলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসে আহত হয়েছে ১১ শ্রমিক। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হলের দ্বিতীয় তলার বেলকনির ঢালাই চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টার দিকে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ঢালাই শুরু হলে সেন্টারিং এর কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং হঠাৎ করেই ছাদটি ধসে যায়। এতে কাজরত শ্রমিকরা নিচে পড়ে যান এবং কোমর, হাঁটু ও পিঠে আঘাত পান। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়, সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল নিম্নমানের রড। এ ছাড়া লোহার পাইপের পাশাপাশি খুঁটির কয়েক জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ ও পাটের রশি। বৃষ্টির মধ্যেই চলছিল ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। যার কারণে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে পুরো কাঠামো।

নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত এক শ্রমিক জানান, ঢালাই কাজ দুপুরে শুরু হয়েছে। পরে দুপুরের খাবারের পর থেকে আবার চলছিল। বিকেলে হঠাৎ করে পুরো ছাদ ধসে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ধসে পড়া ছাদের নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে খুবই চিকন ও নিম্নমানের রড, যেগুলোর বেশিরভাগই জোড়া দেওয়া। এ ছাড়া খুঁটির ক্ষেত্রে লোহার পাইপ ব্যবহারের কথা থাকলেও বাঁশ এবং পাটের রশি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে যদি এমন অবহেলা দেখা যায় তাহলে হলে উঠার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কে দেবে?’

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ছাদ ধসের ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যাই। আহত শ্রমিকদের একজন কোমরে ব্যথা পেয়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর এমন ঘটনা কেন ঘটল এ বিষয়ে দ্রুতই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নির্মানাধীন ভবনের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, ‘আমরা সবকিছু চেক করেই ছাদ ঢালাই শুরু করি। মাঝখানে বৃষ্টি হওয়ায় নিচের খুঁটি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’

শ্রমিকদের কোনো নিরাপত্তা ছিল কি না জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে থাকি।’

প্রকৌশল দপ্তরের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে কি না জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘এটা আমাদের কোনো গাফিলতি নয়, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ‘

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ধসে যাওয়ার ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি দেওয়া হবে।’