জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে: ডা. তাহের

অনলাইন ডেস্ক
৩১ জুলাই ২০২৫, ২১:১১
শেয়ার :
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে: ডা. তাহের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের মধ্যবর্তী চায়ের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন তিনি।

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আজকের আলোচনায় আমরা সাতটি এজেন্ডা পেয়েছি, তবে এখন পর্যন্ত আলোচনা চলছে একটি বিষয়—নারীদের আসন নিয়ে। এই বিষয়ে জামায়াতসহ সব ইসলামি দল একমত হয়েছে। একটা বড় ধরনের দেশি-বিদেশি প্রোপাগান্ডা চালানো হয় যে আমরা নাকি নারীর অধিকার মানি না। অথচ, আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে বা ডেলিগেশন এলে তারা কমনলি যে তিনটা প্রশ্ন তোলে তার মধ্যে একটি নারীর অবস্থান নিয়ে। এবার আমরা একমত হয়েছি যে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ইন প্রিন্সিপাল একমত।”

তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন পিআর সিস্টেমে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হওয়া উচিত, এতে নারীরা নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। তবে বর্তমান কিছু প্রস্তাব নিয়ে দলের দ্বিমত রয়েছে। যদি ৫% কোটায় ১০টি দল ক্যান্ডিডেট দেয়, তাহলে দেখা যাবে হয়তো নারী জয়ী হলেন না, এমপি হলেন না—তখন নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়বে না। তাই এমন নিরাপদ কাঠামো দরকার যাতে নারীরা নিয়মিত জিতে আসতে পারেন।’

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, `আমরা অনেক জায়গায় একমত হয়েছি। কিছু রিজার্ভেশন রয়েছে, যা আমরা ‘‘নোট অব ডিসেন্ট’’ আকারে দিয়েছি, কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী? আমরা বলেছি, এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, নইলে এই আলোচনার ফল হবে না।”

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আগামী পার্লামেন্টে গিয়ে আইন হবে। এটা অবাস্তব ও অসামাজিক বক্তব্য। কারণ, পরবর্তী পার্লামেন্ট গঠিত হবে এই সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে আবার পুরনো নিয়মে নির্বাচন হবে।”

তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যে প্যানেল অব লইয়ার্সের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আইনি ভিত্তি তৈরির কয়েকটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন।

উদাহরণ দিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় গণভোট ও প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পার্লামেন্টে র‍্যাটিফাই (অনুমোদন করা) করে তা সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে। এরশাদের সময়ও একই হয়েছে।’

তিনি বলেন, “এই সরকারের মেয়াদ বা বৈধতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কিন্তু ৫ আগস্ট জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, আর ৮ আগস্ট সরকার গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলে দেয়নি সরকারের মেয়াদ কতদিন। অতএব, জনগণের অভিপ্রায়ই হচ্ছে সুপ্রিম ল।’

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সবশেষে, আমরা চাই এই সনদ ও প্রোক্লেমেশনকে সাংবিধানিক ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হোক। পরবর্তী সংসদে এটি র‍্যাটিফাই হলে কেউ আর আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না—এটা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য। আমরা তো বলেছি, যদি বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে তারা দিক। যদি না পারে, তাহলে আমরা বিকল্প পথ খুঁজে নেব।’

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটি কাগজ আছে—একটি হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি হচ্ছে জুলাই সনদ। সনদ হলো এই সংলাপের আউটকাম। তবে এর খসড়া এখনও অসম্পূর্ণ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা আজ অথবা কালকের মধ্যে এর লিখিত জবাব দেব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সনদকে আইনি মর্যাদা কীভাবে দেওয়া যাবে। আমাদের মতে, যেভাবে অতীতে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও প্রোক্লেমেশন র‍্যাটিফাই হয়েছে, একইভাবে এই সনদ ও ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে।’