মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ নারীর বিরুদ্ধে
মাদারীপুর জেলার শিবচরে রত্মা বেগম নামে এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, জোরপূর্বক জমি লিখে নেওয়া এবং চাঁদা দাবি করছেন ওই নারী। প্রথমে মামলার ভয় দেখিয়ে, পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে একটি পরিবারের একাধিক সদস্যকে হয়রানি করছেন তিনি। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে মাদারীপুর আদালত ও শিবচর থানায় একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন ওই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে এসে মাদারীপুর আদালত এবং থানা পুলিশের কাছে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের একাধিক চাকুরিজীবী সদস্যদের। ফলে আর্থিক ক্ষতিসহ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে অভিযুক্ত রত্না বেগম একটি সাব পোষ্ট অফিসের পিওন পদে চাকুরি করলেও নিজেকে সরকারি পোষ্ট মাস্টার বলে প্রচার করে অনেকের সঙ্গে প্রতারনাও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল গ্রামের সালাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী রত্মা বেগম স্বামীর সরলতার সুযোগ নিয়ে স্বামী সালাউদ্দিন চৌধুরীর বড় তিন ভাই, বোন এবং ভাতিজার বিরুদ্ধে প্রথমে একটি মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। পরে রত্মা বেগম গোপনে তার স্বামীর মাথায় আঘাত করে মারামারির ঘটনা সাজান। পরে তাকে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা করান। তবে সুস্থ্য হবার পর ওই ঘটনাকে পুঁজি করেই পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর শিবচর থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয় তারই ভাসুর মেহেবুবুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব, মাইনুল হক চৌধুরী, বোরহান চৌধুরী, বড় ননদ কেয়া চৌধুরী, বড় ভাসুরের ছেলে সিফাত চৌধুরী এবং মো. রোকন নামে স্থানীয় মাদ্রাসার এক হুজুরকে। এই মামলার পর গত ২৭ মার্চ শিবচর থানায় ফের একটি সাধারণ ডায়েরী করেন রত্মা বেগম। এরপর গত ১ জুন চাঁদাবাজীসহ একাধিক অভিযোগ উল্লেখ্য করে আদালতে আবারও একটি মামলা দায়ের করেন রত্মা বেগম।
জানতে চাইলে মেহেবুবুজ্জামান বিপ্লব চৌধুরী বলেন,'আমার ছোট ভাই সালাউদ্দিন চৌধুরী সহজ-সরল মানুষ। জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধই নাই। যার যার অংশ তাদের সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রত্মা বেগম আমাদের আরও জমি নিজের নামে দখল করতে চায়। এ নিয়েই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। রত্মা বেগম তার স্বামীর মাথায় আঘাত করে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা ঢাকায় চাকরি করি। এই একের পর এক মামলার ঘটনায় আমরা খুবই বিব্রত। এবং ক্ষতিগ্রস্থ।'
তিনি আরও বলেন, 'জমি এবং মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করছে রত্মা বেগম। তিনি এবং তার বাবার বাড়ির লোকজনসহ স্থানীয় কিছু লোক আমাদের হয়রানি করতে এই মামলা মোকাদ্দমা করে যাচ্ছে।'
আরেক ভুক্তভোগী বোরহান চৌধুরী বলেন, 'আমাদের ভাই-ভাতিজারা ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। মামলা দিয়ে আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। রত্মা বেগমের এই মিথ্যা মামলার অত্যাচার থেকে আমরা বাঁচতে চাই।'
ভুক্তভোগী স্থানীয় কওমী মাদ্রাসা ও এতিম খানার শিক্ষক মো.রোকন মিয়া বলেন, 'আমি তাদের বাবার নামে একটি এতিমখানা ও মাদ্রাসায় চাকরি করি। রত্মা বেগম আমাকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বলে। আমি রাজী না হওয়ায় মিথ্যায় মামলায় আমার নাম দিয়েছে। আমি কিশোর গঞ্জ থেকে এখানে এসে চাকরি করছি। আমাকে অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে রত্মা বেগম ও তার স্বামী।'
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে উৎরাইল সাব পোষ্ট অফিসের পিয়ন রত্মা বেগম বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তারাই আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। বাড়িতে আমার স্বামীর প্রাপ্য অংশ তারা দেয় না। আমরাও মিমাংসা চাই।'
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আজহার আলী বলেন, 'যতটুকু জানি বিষয়টি আমি এ থানায় যোগদানের আগে ঘটেছিল। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'