রাউজানের ঘটনায় কঠোর বিএনপি
রাউজানে দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ স্থগিত করা হয়। এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দোষারোপ করছে। অন্যদিকে, বিএনপি ও যুবদলের ৫ শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে মিরসরাইয়ে।
জানতে চাইলে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আমাদের সময়কে বলেন, রাউজানে সংঘর্ষের পর দল কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে ভবিষ্যতেও ছাড় পাবে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে ন্যূনতম ছাড় না দেওয়ার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন তিনি। স্থানীয় নেতারা বলছেন, রাউজানে অতীতেও এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। তাতে বিএনপি কঠোর পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত সব নেতাকেই দলে টেনেছে। ফলে রাউজানের রাজনীতি ছয় দশক ধরে ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আনা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর গত এক বছরে রাউজানে ১৫ ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩টি রাজনৈতিক হত্যা। বিএনপির দুপক্ষের সংঘাতের কারণেই এই হত্যা। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কারণে রাউজানে অন্তত ১১০ খুন হয়েছে বলে জানা যায়। নিহতদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
গতকাল বুধবার বিকালে নুর আহমদ সড়কের নাসিমন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবারের হামলার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগীদের দায়ী করেছে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার অন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদের কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন।
সর্তারঘাট এলাকায় পৌঁছার পর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ৭০/৮০ জন লাটিসোটা ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে গোলাম আকবর খন্দকার ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা করে। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে গোলাম আকবর খন্দকারের ওপর হামলা চালানো হলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন অন্তত ৩০ জন। সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস কাদের চৌধুরীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
রাউজানে আলাদা কর্মসূচি : নগরীর নুর আহমদ সড়কের উত্তর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে যখন সংবাদ সম্মেলন চলছিল, তখন রাউজানে গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে গোলাম আকবর খন্দকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। বক্তারা বলেন, গোলাম আকবর খন্দকারকে রাউজানের যেখানেই পাওয়া যাবে শায়েস্তা করা হবে। সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ মেম্বার, সহ-সভাপতি সাবের সুলতান, সাবেক পৌর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুরুল হক প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
থানায় যায়নি কোনো পক্ষ : আগের দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলেও গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি। রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গতকালের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা বা অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
গত মঙ্গলবার সর্তারহাটে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গোলাম আকবর খন্দকারসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। ওই ঘটনার পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া দলের ভেতর সংঘাত, হানাহানি সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করায় উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারইয়ার হাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিনকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এক পরিবারে জিম্মি রাজনীতি : স্বাধীনতার পূর্বাপর সময় থেকে রাউজানের রাজনীতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবারে হাতে জিম্মি। মাঝে মাঝে এ পরিবারের সদস্যরা রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিকছড়ির রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করেন।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
অতীতে বহিষ্কার পরে অন্তর্ভুক্তি : ২০০১ সালে সাকা চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে তাকে পুনরায় দলে অন্তর্ভুক্ত করে এবং মনোনয়নও দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে জয়ী হয়ে সাকা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হয়েছিলেন।
ফজলে করিমের সমর্থকরা বিএনপিতে ঢুকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গত ১৫ বছর যেসব সন্ত্রাসীকে নিয়ে রাউজান নিয়ন্ত্রণ করতেন, তাদের অনেকে বিএনপিতে ভিড়ে গেছেন। তারা দুই ভাগ হয়ে গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াস কাদের চৌধুরীর পক্ষে ভাগাভাগি হয়ে রাউজানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।