পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ সালমান, শায়ান ও শিবলী

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ সালমান, শায়ান ও শিবলী

‘আইএফআইসি আমার বন্ড’র মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সালমান রহমানকে ১০০ কোটি ও শায়ান রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। গতকাল বুধবার বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১ হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন বিএসইসির ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই সেটার সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়। ওই বন্ডের ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, যা ওই বছরের ২ মার্চ নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।

কোম্পানিটি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। ওই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয় বা উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

ওই বন্ডের জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের দায়িত্ব পালন করে।

আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার)। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে।

এ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমানকে ১০০ কোটি ও ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদ-ে দ-িত করার এবং পুঁজিবাজারে উভয়কে আজীবন অবাঞ্ছিত (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

একই সঙ্গে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এবং তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ছাড়া সভায় বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুক বন্ডের অনিয়মের দায়ে তাদের দুজনকেই একই শাস্তি প্রদান করা হয়।

আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এআরএম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকেও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদ- প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ওই বন্ড সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন।

গ্রিন সুকুক বন্ডের অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসি জানায়, বেক্সিমকোর ৩ হাজার কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি গ্রিন সুকুক বন্ডের প্রস্তাব ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত কমিশনের ৭৭৯তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিধিমালার কিছু বিধি থেকে বেক্সিমকোকে অব্যাহতি প্রদান করে কমিশন। কিন্তু ওই অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই সুকুক ইস্যুর আবেদন ২০২১ সালের ২৩ জুন কমিশন অনুমোদন করে এবং ৮ জুলাই সম্মতিপত্র বা কনসেন্ট লেটার ইস্যু করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ক্ষমতা অপব্যবহার করে ওই সুকুকের পাবলিক সাবসক্রিপশন পিরিয়ড ওই বছরের ২৩ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।