বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত

আবু আলী
৩১ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাংলাদেশকে সবুজ সংকেত

বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত দিয়েছে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর ইউএসটিআর। তবে এ জন্য চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বাড়াতে হবে। কেন না, এ মুহূর্তে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে দেশটির সঙ্গে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ৭ লাখ টন গম ও ২৫টি বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ শুল্ক কমাতে দেশটির দেওয়া আরও কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ ইস্যুতে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। গত মঙ্গলবার রাতে তারা প্রথম দফায় আলোচনা করেছেন। সেই সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকের প্রথম দিন ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে এ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিনের আলোচনায় শুল্ক হার নির্ধারণ হয়নি। বাংলাদেশের প্রত্যাশা মার্কিন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা।

চলতি দফায় আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গড়ে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে বাংলাদেশকে। তবে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ সময়কালের আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, মার্কিন পাল্টা-শুল্ক কমানো হয়েছে- এমন কিছু দেশের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও শুল্কহার ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ হারে সমঝোতা করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশেরও তাই প্রত্যাশা, এ হারের মধ্যেই শুল্ক নামিয়ে আনবে ট্রাম্প প্রশাসন।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্পের অবস্থান বোঝা খুবই কঠিন। তিনি কখন কী করে বসেন! এদিকে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বারবার বলা হলেও দেশটির বিপরীতে এবার কড়া বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ‘জরিমানা’ও যুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে ট্রাম্পের তরফে।

বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রহমান গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছেন, ইউএসটিআর বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই পজিটিভ। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সংকেত দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরকে বলেছে (ইউএসটিআর), এক বছরের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি শূন্যে নামানো যায় কি না, সেটা বিবেচনায় রেখে আমদানি বাড়াতে হবে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেটা তারা ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছে। আমরা তাদের দেওয়া প্রস্তাব ও আমাদের পরিকল্পনা এবং প্যাকেজ ধাপে ধাপে বাস্তবয়ন করব।

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আগামীকালও আমাদের বৈঠক আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআরের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। রাতে বৈঠক শুরুর আগে মাহাবুবুর রহমান বলেন, তারা আমাদের ব্যাপারে খুবই পজিটিভ।

বাণিজ্য ঘাটতি অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশটিতে রপ্তানি হয় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর আমদানি হয় প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের। সরকার চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে এ ঘাটতি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে। যদিও ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে সেটা ৬ বিলিয়ন ডলার কমানোর কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। সঙ্গে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুল্ক ইস্যুর আলোচনার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডিসি।

মার্কিন পাল্টা শুল্ক কমাতে চূড়ান্ত আলোচনার আগে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আগামী এক বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গম, ডাল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন পাল্টা শুল্কহার ১ আগস্ট (আগামীকাল) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হলে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারে ঢাকা। কারণ, বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কহার আদায় করতে পারলেও তাদের কোনো পণ্য চীন থেকে পুনঃজাহাজীকরণ করা হলে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ভিয়েতনাম প্রচুর চীনা কাঁচামাল আমদানি করে, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত তাদের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দিতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের শুল্ক হার যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছাকাছি হয়, সেই চেষ্টা করতে হবে। তবে, কিসের বিনিময়ে শুল্ক ছাড় পেলাম তাও দেখার বিষয়। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুল্ক ছাড় নিতে হবে।