ভুয়া র্যাব ধরতে ধাওয়া আসল র্যাবের, দুই পক্ষকেই মারধর করল জনতা
ফরিদপুরে ভুয়া র্যাবকে ধাওয়া দিয়ে আটক করতে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়ে আসল র্যাবের সদস্যরা। পরে আসল র্যাব ও ভুয়া র্যাব পরিচয়দানকারীদের দুটি মাইক্রোবাস আটক করে তাদের মারধর করেছে জনতা। এ সময় ভুয়া র্যাব বহনকারী মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। পরে নগরকান্দা থানা-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারা আহত আসল র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চর যশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলার মোড় এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুইটি মাইক্রোবাস দ্রুত গতিতে আসছিল এবং একটি মাইক্রোবাস থেকে সাইরেন বাজছিল। এ জন্য এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে এলাকাবাসী মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে প্রথমে সামনের মাইক্রোবাসটি থামায়। মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তবে তাদের কারও শরীরে র্যাবের পোশাক না থাকায় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এ সময় ভুয়া র্যাব সদস্যরা মাইক্রোবাস থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তাদের আটক করে মারধর করে।
এরইমধ্যে পেছনে ধাওয়া করে আসা আসল র্যাবের গাড়িটি ওই এলাকায় হাজির হয়। এ গাড়ির সবাই র্যাবের পোশাক পরিহিত ছিলেন না। তারা গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে জনতার হাতে মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব সদস্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। পরে তারাও স্থানীয় জনতার হাতে মারধরের শিকার হন।
জনতার হাতে আটক হয়ে মারধরের শিকার ভুয়া র্যাব সদস্যরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন (৪৯), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের মোহাম্মদ মিন্টু (৪৫), গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ি গ্রামের সাইফুল শেখ (৩৪), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর এলাকার মোহাম্মদ জামিল (৩২) ও ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ দিদার (৩৬)।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমীরুল ইসলাম বলেন, জনতার হাত থেকে র্যাব ও ভুয়া র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নগরকান্দা থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা ভুয়া র্যাব ও আহত সব র্যাব সদস্যদের নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার উদ্দেশে রওনা হন।
র্যাব-১০-এর ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানান, র্যাব-১০-এর হেড কোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাতদলকে ধাওয়া করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন ভুল বুঝে উভয়ের ওপর চড়াও হয়। কিছু র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে থাকায় জনতা তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত র্যাব বলে চিনতে ভুল করে।
র্যাব-১০-এর মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ভুয়া র্যাবের দলকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ধাওয়া করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ধরা গেছে।’
নিজেরাও মারধরের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন ভুয়া র্যাব পরিচয়কারীদের মারপিট করছিলেন, তখন তাদের যাতে মেরে না ফেলেন, এই আশঙ্কায় আমরা জনগণের পিটুনি থেকে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম পর্যায়ে জনগণ আমাদেরকেও ভুয়া র্যাব মনে করেছিলেন। এ কারণে আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেছিল।’
