শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে অভিভাবকের করণীয়
শিশুর হৃদরোগ বলতে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি আক্রান্ত করে- এমন বিভিন্ন অবস্থা বোঝায়। এর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি ও পরবর্তী জীবনে নানা ধরনের ত্রুটি- উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। Narayan Health -এর মতে, শিশুর জন্মগত ত্রুটি (Congenital Heart Disease, CHD) হলো সবচেয়ে পরিচিত। যেখানে হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকে বা ভাল্ব (Valve)-এর অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। কাওয়াসাকি রোগ (Kawasaki disease) এবং রিউম্যাটিক হৃদরোগ, (Rheumatic Heart Disease), acquired হৃদরোগ, যা শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
হৃদরোগের ধরন : এর মধ্যে জন্মগত হৃদরোগ (Congenital Heart Disease) অন্যতম। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে শিশু হৃৎপিণ্ডের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যেমন- Ventricular septal defect (VSD), Atrial Septal Defect (ASD), Valve anomaly. এছাড়া রয়েছে কাওয়াসাকি রোগ (Kawasaki Disease)। এটি করোনারি ধমনির প্রদাহ সৃষ্টিকারী একটি বিরল রোগ, যা প্রায়ই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর দেখা যায়। রিউমেটিক হার্ট ডিজিস (Rheumatic Heart Disease) আরেকটি। স্কারলেট জ্বর বা সোর থ্রোট (Sore throat) সৃষ্টিকারী একই ব্যাকটেরিয়া (Streptococcus) দ্বারা সৃষ্ট এটি। হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের ক্ষতি করতে পারে। অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia)-এর কারণে অনিয়মিত হৃৎপিণ্ডের ছন্দ শিশুদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করে। কার্ডিওমায়োপ্যাথি (Cardiomyopathy) হলো হৃৎপিণ্ডের পেশির একটি রোগ। এতে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ট বড় হয় এবং কার্যকারিতা কম হয়। হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure) হলো জন্মগত ত্রুটিযুক্ত হার্ট।
উপসর্গ বা লক্ষণ : লক্ষণগুলো রোগের তীব্রতা ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- শ্বাসকষ্ট; শিশুদের খাওয়ানোর অসুবিধা; ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি; দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন; পা, চোখের চারপাশে ফোলা; নীল ত্বক বা ঠোঁট (Cyanosis); ক্লান্তি; বুকব্যথা; মাথা ঘোরা; অস্বাভাবিক হার্টের শব্দ, (Murmur) ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় : এক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে নীল ত্বক বা ঠোঁট (Cyanosis) একটি। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অস্বাভাবিক হার্টের শব্দ (Murmur). নির্ণয়ে এ পরীক্ষা জরুরি। এছাড়া ল্যাব পরীক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে Electrocarduogram (ECG) একটি। এর মাধ্যমে হার্টের ছন্দের সমস্যা পরীক্ষা করা হয়। Chest X-Ray-এর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের আকার ও আকৃতি পরীক্ষা করতে হয়। Echocardiogram-এর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কার্যকারিতা নির্ণয় করা হয়। Cardiac Catheterization-এর মাধ্যমে হার্টের প্রকোষ্টে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে হার্টের চাপ (Pressure) ও (Flow) প্রবাহ দেখা হয়।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
চিকিৎসা : হৃদরোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ওষুধ থেকে অস্ত্রোপচার- সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়াও ওষুধ সেবন করতে হয় হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure) চিকিৎসার জন্য, ব্লাড প্রেসার (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণের জন্য, অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia) নিয়ন্ত্রণের জন্য।
অস্ত্রোপচার পদ্ধতি : ভাল্ব (Valve) মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য। হার্টের ছিদ্র বন্ধ করার জন্য। কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধন করার জন্য।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন : স্বাস্থ্যকর খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুমনো, নিয়মিত খেলাধুলা করা জরুরি।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মিরপুর, ঢাকা
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা
হটলাইন : ১০৬৭২
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন