মাইলস্টোনে নিহতর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি /
নতুন ব্যাখ্যায় যা দাঁড়িয়েছে
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ২৪ জুলাই প্রকাশিত তালিকায় মৃতের সংখ্যা ১৫ জন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে, ২৭ জুলাইয়ের হালনাগাদ তালিকায় এই সংখ্যা সংশোধন করে ১৪ জন দেখানো হয়েছে। ফলে গতকাল সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা হয় ৩৪ জন। তবে নতুন করে আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে এই সংখ্যা আজ সোমবার, ২৮ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ জন।
রবিবার (২৭ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হলে সেটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠে। এরপর পুনরায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ফরেনসিক তদন্তের ভিত্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
সিএমএইচ সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাইয়ের দুর্ঘটনার পর মর্চুয়ারিতে মোট ১৫টি বডিব্যাগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তুরাগ থানা পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে এগুলোর মধ্যে ১১টি সম্পূর্ণ মরদেহ, ২টি অপূর্ণাঙ্গ মরদেহ এবং ৫টি বিচ্ছিন্ন দেহাংশ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৯টি মরদেহ স্বজনরা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারায়, ৮টি ২১ জুলাই এবং ১টি ২২ জুলাই হস্তান্তর করা হয়েছিল।
বাকি ২টি সম্পূর্ণ মরদেহ, ২টি অপূর্ণাঙ্গ মরদেহ এবং ৫টি দেহাংশ নিয়ে ফরেনসিক বিশ্লেষণ শুরু হয়। ২২ জুলাই সিআইডির ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল ও সিএমএইচ থেকে মোট ১৪টি নমুনা সংগ্রহ করে এবং পরিবারের কাছ থেকে ১১টি রেফারেন্স নমুনা নেয়। বিশ্লেষণের পর জানা যায়, যে বডিব্যাগে ৫টি বিচ্ছিন্ন দেহাংশ ছিল, সেগুলো দুই শিক্ষার্থী- লামিয়া আক্তার সোনিয়া ও আফসানা আক্তার প্রিয়ার দেহের অংশ। ফলে এগুলো পাঁচজনের পৃথক দেহাংশ নয়, বরং দুটি মরদেহ হিসেবে গণনা করা হয়।
এই ফলাফলের ভিত্তিতে সিএমএইচে সংরক্ষিত মৃতদেহের প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়ায় ৫টি। এদের সঙ্গে আগেই হস্তান্তর হওয়া ৯টি মরদেহ মিলিয়ে চূড়ান্ত সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪, যা ২৭ জুলাইয়ের হালনাগাদ তালিকায় প্রতিফলিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক চিঠির মাধ্যমে এই সংশোধিত তথ্য নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন ভুক্তভোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৮ জন আহত হয়ে ভর্তি ছিলেন এবং ৩৪ জন মারা গেছেন (সাহিল ফারাবি আয়ান বাদে)।
বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত ও আহতদের সংখ্যা নিম্নরূপ:
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট: ৬৬ জন ভর্তি, ১৭ জন মৃত্যু (সাহিল ফারাবি আয়ান বাদে)
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ): ১১ জন ভর্তি, ১৪ জন মৃত্যু
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ১ জন ভর্তি
টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু (অজ্ঞাত)
ইউনাইটেড হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল: ১ জন মৃত্যু
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত দেহাবশেষগুলো পৃথক মরদেহ হিসেবে গণনা করা হয়েছিল। তবে, ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কিছু অংশ একই ব্যক্তির। এর ফলে মৃতের সংখ্যায় পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের একটি ভবনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই শিশু।
এছাড়া ওই যুদ্ধবিমানের পাইলট, দুই শিক্ষক, অফিস সহায়ক ও দুই অভিভাবকেরও মৃত্যু হয়েছে।