অর্থবছরের শুরুতে সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে
প্রতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বড় অঙ্কের ঋণ নিলেও এবার ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ২২ দিনে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সরকারের আয় কম থাকে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায় হয় না বললেই চলে। কিন্তু ব্যয়ের খাত বন্ধ থাকে না। ফলে এ সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকেই ঋণ নিয়ে সেটা মেটানো হয়। তবে এবার ব্যাংকঋণের চাহিদা একটু কম রয়েছে।
প্রতিবছরই বিপুল অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করছে সরকার। এই ঘাটতি মেটনো হয় দুটি উৎস থেকে। এগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাং ঋণ ও সঞ্চয়পত্র খাত। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি বাজেটে প্রক্ষেপিত মোট ঘাটতির প্রায় ৪৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের সংশোধিত ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই ঋণের পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত অর্থবছরের আগস্টের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরকারকে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে বিগত অর্থবছরগুলোর শুরুতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ নেয় সরকার। যদিও এবার অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের মোট ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। গত ২২ জুলাই পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ফলে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২২ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৯৫ হাজার ৫১ কোটি টাকা। যা গত ২২ জুলাই পর্যন্ত কমে হয়েছে ৮৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জুলাই মাসের প্রথম ২২ দিনে সরকারের ঋণ কমেছে প্রায় ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পরিমাণ ঋণ সরকার কেন্দ্রীয় বাংকে পরিশোধ করেছে। গত অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে এই পরিশোধের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণকে টাকা ছাপানো হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২২ জুলাই শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট বাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের ৩০ জুন শেষে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। ফলে জুলাই মাসের প্রথম ২২ দিনে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে মাত্র ৯১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি ছিল। গত জুলাই মাসে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের ওই মাসে ঋণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ায় সরকারের আয়েও প্রভাব পড়ে। ফলে খরচ মেটাতে ওই মাসে অধিক পরিমাণ ঋণ নেয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সরকারের নীট ব্যাংক ঋণ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই ছিল। ওই অর্থবছরে সরকারের নীট ব্যাংক ঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকার নেয় ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নীট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।