পদ্মায় তীব্র ভাঙন, আতঙ্কে নদীপাড়ের ৪ ইউনিয়নের মানুষ
কুষ্টিয়ার প্রমত্তা পদ্মা নদী পানির তোড়ে মিনিটে মিনিটে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে। এতে বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। বিশেষ করে মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার হাজারও মানুষ চরম ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছেন।
আজ রবিবার ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার পানি বিপদ সীমানার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মার তীব্র ভাঙনে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক হুমকির মুখে রয়েছে।
এদিকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় নতুন করে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, টিকটিকিপাড়া, মসলেমপুরসহ আশপাশের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও নানা স্থাপনা। হুমকির মুখে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ।
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বাড়ছে পদ্মার পানি। তাই ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের ফসল তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, উজান থেকে নেমে আসা পানি, টানা বর্ষণ ও নদীর প্রবল স্রোতের কারণে পদ্মায় হঠাৎ করে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মুন্সিপাড়া ও টিকটিকিপাড়ায় ভাঙন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
ভাঙনে আতঙ্কিত এলাকাবাসী রাতের ঘুম হারাম করে নদীর পাড়ে প্রহর গুনছেন। আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন শত শত মানুষ। এরইমধ্যে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে কয়েক একর ফসলি জমি ও বসতঘর। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পদ্মা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী নদী পাড়ে মানববন্ধন করে অবিলম্বে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান, নতুন করে আর কোনো আশ্বাস নয়, এখন চাই দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ।
বাহিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশানআরা বেগম ও বাহারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন জানান, ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ, বাহাদুরপুর, মোকারিমপুর ও বাহিরচর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের মানুষ আতংকে মধ্যে দিনযাপন করছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাহিরচর ইউনিয়নের ১২মাইল, টিকটিকিপাড়া, মসলেমপুর ও মুন্সিপাড়াসহ আশপাশের ছয় কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে বিভিন্ন স্থাপনা ও নদী প্রতিরক্ষা বাঁধও। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে ৪টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী ঘেঁষা উপজেলার চার ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের মানুষ।ইতিমধ্যে চরের বেশ কিছু আবাদি জমিসহ প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পদ্মা নদীর ভাঙন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ষালেদাগ গ্রামের নবীর উদ্দিন জানান, পদ্মা নদীতেই কয়েক শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। গত ২ সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন।এই ভাঙনেও একরের পর একর কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, ১২ মাইল, টিকটিকিপাড়া ও মসলেমপুরের এই ৪ গ্রামের প্রায় ৬কি.মি. এলাকায় এই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ দিন ধরে বাহিরচর ইউনিয়নের ১২মাইল, টিকটিকিপাড়া, মসলেমপুর ও মুন্সিপাড়া-সহ আশপাশের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি; হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও নদী প্রতিরক্ষা বাঁধও। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে চারগ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষ।
ইতোমধ্যে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. আনোয়ার হোসাইন ও কুষ্টিয়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীও আমাদের কাছে একটি আবেদন দিয়েছে। সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতই তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় খোঁজ রাখা হচ্ছে। তবে নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এরইমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই এসব এলাকায় ভাঙনরোধে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।’
এদিকে টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে জেলায় সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পদ্মাসহ সকল নদীর পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ‘তালবাড়িয়া থেকে ৯ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ১,৪৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। মুন্সিপাড়া, টিকটিকিপাড়া এবং আশপাশের এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’