দুই সমন্বয়ককে তুলে নেয় ডিবি /
৩ দফা দাবিতে আলটিমেটাম
গত বছরের ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাঁচজনকে ডিবির হেফাজতে নেওয়া হয়। এ দিন ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার জানান, ‘গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে জানতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’ এর আগে ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসারত আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।
২৭ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
এদিন হতাহতের দায় নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবির নারী সেল, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও বামপন্থি সাতটি ছাত্র সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। এদিনও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে নানা মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আদালতের রায়ের পর সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাতে নতুন তিন দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয় তারা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের খোঁজ নিতে ২৭ জুলাই বিকালে ডিবি কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ডিবিপ্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের দেখা করাতে অস্বীকৃতি জানান। এদিন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গণতন্ত্রে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সংকট উত্তরণে স্বল্প সময়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে মত দেন তিনি। আর ২৭ জুলাই রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারাদেশে ৭৩৬টির বেশি মামলা হয়। ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় ২ হাজার ৫৩৬ জনকে।
এদিকে, সমন্বয়কদের হেফাজতে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ। এ ছাড়া প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনায় ঢাকায় অবস্থিত ১৪টি মিশন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে লেখা এক যৌথ চিঠিতে গভীর উদ্বেগ ও মর্মাহতের কথা জানায়। গভীর উদ্বেগ জানায় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাবিদ, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরাও। অন্যদিকে, ২৬ জুলাই থেকে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয় সরকার। এদিন রাতে নিজ বাসায় বৈঠক শেষে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রবি, সোম ও মঙ্গলবার কারফিউ অব্যাহত থাকবে। এসব এলাকায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?