বাবা-মা বুকে ধরে রেখেছেন ছেলের স্মৃতি

মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ দীপ্ত দে

এসআর শফিক স্বপন, মাদারীপুর
২৭ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাবা-মা বুকে ধরে রেখেছেন ছেলের স্মৃতি

‘আমি এক অভাগী মা, যে ছেলেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমার ছেলে বলেছে- বাঁচাও বাঁচাও। কেউ ওকে উঠালো না।’ -এই কথাগুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিকা দে। তার ছেলে দীপ্ত দে (২২) ছিলেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাদারীপুরে তিনিই প্রথম শহীদ হন।

দীপ্ত দে’র পরিবার এখনও ছেলের শোকে মুহ্যমান। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তাদের ঘরে দীপ্তর ব্যবহৃত বিছানা-বালিশ এখনও তেমনই খালি পড়ে আছে। বিছানার পাশেই তার পড়ার টেবিল। সেখানে সাজানো রয়েছে স্নাতকপড়ুয়া দীপ্তর বইপত্র ও হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ঘরের আলমারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে দীপ্তর পোশাক। ছবি ও পোশাক ঠিক আগের মতোই সাজানো। দীপ্তর বাবা স্বপন দে এবং মা মনিকা দে প্রতিদিন সেই ঘরে গিয়ে ছেলের স্মৃতিতে ডুবে থাকেন। গত এক বছর ধরেই দীপ্তর থাকার রুমটি এভাবেই যত্নে রেখেছেন তার মা মনিকা দে ও বাবা স্বপন দে।

দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ছিলেন দীপ্ত। তার মৃত্যুর শোক এখনও ভুলতে পারেননি বাবা-মা। কেউ বাসায় এসে দীপ্তর কথা বললে মনিকা দে আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে অশ্রু। ছেলের ছবি আঁকড়ে ধরে নীরবে কাঁদেন।

ছোট ভাই হেমন্ত দে এইচএসসি পাস করেছে এবার। বাড়িতে দীপ্তর ঘরটি আজও ঠিক আগের মতোই রয়েছে। খাট, বই, কম্পিউটার- সবই একই জায়গায়। পরিবারটির কাছে এখনও মনে হয়, দরজায় টোকা দিয়ে হয়তো দীপ্তই আসছে। দীপ্তর বাবা স্বপন দে জানান, গত এক বছরে প্রশাসনের কাছ

থেকে নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও এখনও দীপ্তকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ ঘোষণা করা হয়নি। তাদের একটাই দাবি- সরকার যেন দীপ্তকে শহীদের স্বীকৃতি দেয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সদর উপজেলায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাদারীপুর শাখার আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ বলেন, সরকার যদি স্মৃতিস্তম্ভ না করে, তাহলে আমরা নিজেরাই স্মৃতিস্তম্ভ বানাব। দীপ্ত যেন মাদারীপুরবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই দীপ্ত দে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে বের হন। এরপর তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেন। ডিসি ও এসপির বাসার সামনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী শকুনী লেকে ঝাঁপ দেন। সবাই উঠে এলেও দীপ্ত ডুবে যায়। ফায়ার সার্ভিস কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।