‘মানিক বাহিনী’র হামলায় নিহত শফিকুল, লাশ নিয়ে বিচার দাবি

রংপুর প্রতিনিধি
২৬ জুলাই ২০২৫, ২১:১১
শেয়ার :
‘মানিক বাহিনী’র হামলায় নিহত শফিকুল, লাশ নিয়ে বিচার দাবি

রংপুরের বদরগঞ্জে দোকানঘর নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকের অনুসারী ‘মানিক বাহিনীর’ হামলায় গুরুতর আহত শফিকুল ইসলাম অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আজ শনিবার দুপুরে বাবার লাশ নিয়ে বিচার চেয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের লোকজনরা। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, ‘আমাদের বাবাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, অথচ খুনিরা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

নিহত শফিকুল ইসলাম (৫২) বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপির সমর্থক। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারী ছিলেন।

জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল বদরগঞ্জ বাজারে এক দোকানে বসে থাকার সময় চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক, তার ছেলে তানভীর আহমেদ তমাল ও সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান লাভলু মিয়া। আর গুরুতর আহত অবস্থায় শফিকুলকে ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে টানা তিন মাস ২০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এ ঘটনায় আজ শনিবার দুপুরে নিহতের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে বদরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন পরিবার ও স্বজনরা।

নিহতের মেয়ে মিম আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা হাসপাতালের বিছানায় চার মাস কষ্ট করে মারা গেলেন, আর যারা কুপিয়ে মারল তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নিহত শফিকুল ইসলামের ভাই শফিয়ার রহমান, একই ঘটনায় নিহত বিএনপি নেতা লাভলু মিয়ার ছেলে রায়হান কবির, রংপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আবু জর গিফারি মন্টু এবং পৌর যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সুমন সরদার। কর্মসূচিতে নিহতের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী এবং স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘ঘটনার দিন পুলিশকে বারবার ফোন দিলেও তারা আসেনি। লোক মারা যাবার পর তারা এসেছে। সন্ত্রাসী মানিক ও তার বাহিনীর হাতে দুইজন লোক খুন হয়েছে। পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে যা করার আমরা করব।’

জানা গেছে, বদরগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মিনার এলাকায় একটি দোকানঘর নিয়ে ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়। এটি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা হলেও হামলা ও দোকানপাট লুটের অভিযোগ তুলে ৫ এপ্রিল মানববন্ধনের ডাক দেন দোকানের ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলাম। এ ঘটনার আগের দিন স্থানীয় সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেন কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকের ছেলে ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা তানভীর আহমেদ তমাল।

গত ৫ এপ্রিল দুপুরে বদরগঞ্জ বাজারের এক দোকানে বসে পান খাচ্ছিলেন শফিকুল ও মধুপুর বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক লাভলু মিয়া। তারা দুইজনই মোহাম্মাদ আলী সরকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নিহত পরিবারের অভিযোগ, হঠাৎ সেখানে হাজির হয় চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকসহ তার ‘মানিক বাহিনী’, তার ছেলে তানভীর আহমেদ, ফিরোজ ওরফে ‘মার্ডার ফিরোজ’সহ কয়েকজন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুইজনের মাথায় ও গায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বিএনপি নেতা লাভলু মিয়া। আর গুরুতর অবস্থায় রমেকে ভর্তি হন শফিকুল।

এ ঘটনায় নিহত বিএনপি নেতা লাভলু মিয়ার ছেলে রায়হান কবির বাদী হয়ে পরদিন, ৬ এপ্রিল বদরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক, তার ছেলে তানভীর আহমেদ তমালসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া একই ঘটনার আরেকটি ধারায়—হামলার অভিযোগে দোকান মালিক ইশতিয়াক বাবুর বোনের স্বামী মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে থানায় আরেকটি মামলা করেন। দুই মামলায় কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মানিক, তার ছেলে তমালসহ কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর দুটি মামলা হয়েছে। আহত শফিকুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব।’