সড়ক নির্মাণে ধীর গতি, সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলে দুর্ভোগ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:১৭
শেয়ার :
সড়ক নির্মাণে ধীর গতি, সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলে দুর্ভোগ

নারায়ণগঞ্জের ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালিগঞ্জ সড়ক নামে পরিচিত পরশি-মুড়াপাড়া জিসি ভায়া রূপগঞ্জ সড়ক ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ধীরগতি থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এলজিইডির এ প্রকল্পের বাঘবের থেকে ফজুরবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণকাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু মুশুরী ফজুরবাড়ি থেকে রূপগঞ্জ খেয়াঘাট পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, এ সড়কের হাবিবনগর, ভিংরাবো, ফজুরবাড়ি, নবগ্রাম, ইছাখালী এলাকার বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি এখন চরমে। তবে সড়ক নির্মাণে জমির জটিলতা, সড়কের মাঝখানে ৩০-৩২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায়, বাঘবের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের জমির ক্ষতিপূরণ বিল না দেওয়া ও অতিবর্ষণে কাজের বিলম্ব হচ্ছে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে। 

এ প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৪ ফুট প্রস্থ ও উভয় পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট ফুটপাত সড়ক নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া চারটি ইউড্রেন নির্মাণ, ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বক্স ড্রেইন নির্মাণ, দুইটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ১২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এসব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। 

এ সড়ক নির্মাণে ২০২৩ সালের ৭ জুন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। তারা একই বছর ২৯ মে নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের ২৮ মে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। পরে জমির জটিলতা ও অতি বর্ষণসহ নানা প্রতিকুলতায় নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপরেও নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী গত ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে চলায় চলাচলে মানুষের এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রূপগঞ্জ থানা ভবনের দক্ষিণ পাশ থেকে মুশুরি কবরস্থান পর্যন্ত এ সড়কে চলাচল একবারেই অনুপযোগী। 

শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড় দিয়ে রাজধানীর ডেমরা থেকে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া, রূপগঞ্জ সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়ক। উপজেলা কমপ্লেক্স, পুলিশের সেবায় রূপগঞ্জ থানা, প্রধান ডাকঘর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দুইটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, স্কুল-কলেজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে আসা-যাওয়া করার অন্যতম মাধ্যম এ সড়ক। অথচ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর আগে ঝুঁকির মধ্যে হলেও এ সড়কে চলাচল করা গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টি হলে আর গাড়িতে চলাচলা করা যায় না।

রাতের আঁধারে মালবাহী ভারী যান চলাচল করায় সড়কটিতে আরও বেশি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। কোথাও হাঁটু সমান পানি আর কাদা মাটিতে পরিণত হয়। তখন যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

রূপগঞ্জের দক্ষিণ নবগ্রাম, মাইফরাসপাড়া, ইছাখালী, পাড়াগাঁও, বড়ালু, ডাক্তারখালী এলাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট গর্তে কোথাও হাঁটু সমান পানি। প্রতিদিনই হালকা পরিবহন উলটে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে পথচারীরা চলাচল করতে পারছেন না। পাকা রাস্তার মাঝখানে কাঁদার ছড়াছড়ি। তাতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। পাথরবাহী লরি ও মালবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল করার কারণে সড়কের এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এতে লোকজনের ভোগান্তিও চরমে পৌঁছেছে।

দক্ষিণ নবগ্রামের সামসু বলেন, ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালিগঞ্জ সড়ক সংস্কার কাজ ঠিকাদারির গাফিলতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরহীনতায় ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতিনিয়তই এ সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে এ সড়কে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দ্রুত সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করার দাবি করেন এলাকাবাসী।

রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, ‘এ প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য- ২৪ ফুট প্রস্থ ও উভয়পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট ফুটপাত সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৪টি ইউড্রেন নির্মাণ, ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বক্স ড্রেইন নির্মাণ- দুইটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ১২মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ সকল কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। এ সড়ক নির্মাণে ২০২৩ সালের মে মাসে ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। এ সড়ক নির্মাণের কাজ গত ৩০ জুন তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল।’

ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এর দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ আগামী এক মাসের মধ্যেই এ সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।