চিকিৎসা শেষ না করেই দেশে ফিরতে হচ্ছে আনোয়ারকে

সোহেল রানা, রাজবাড়ী
২৬ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চিকিৎসা শেষ না করেই দেশে ফিরতে হচ্ছে আনোয়ারকে

জুলাই আন্দোলনে বুকে গুলিবিদ্ধ হন আনোয়ার হোসাইন। এতে তার বুক থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২২ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে থাইল্যান্ডে পাঠায় সরকার। কিন্তু চিকিৎসার মাঝপথেই আগামী ৩১ জুলাই তাকে দেশে ফিরতে বলেছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, তার আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসার বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই, বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাস জানে। আনোয়ার বলেন, দূতাবাসের সায় না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে অপারগ।

আনোয়ার রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর গ্রামের মকবুল হোসাইনের ছেলে। গতকাল শুক্রবার থাইল্যান্ডের হাসপাতাল থেকে আমাদের সময়কে এসব তথ্য জানান তিনি। আনোয়ার বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায়। এরপর নানাবাড়ি ও এতিমখানায় বড় হয়েছি। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ সেমিস্টারে পড়ছি, পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করি। স্ত্রী আকলিমা খাতুন বিএসসি নার্সিংয়ে পড়াশোনা করে।

আহত হওয়ার বিবরণ দিয়ে আনোয়ার বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলশান ২-এর শাহজাদপুর এলাকার কনফিডেন্ট টাওয়ারের মাঝামালি এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হই। ওই সময় উপরে হেলিকপ্টার আর নিচে পুলিশ, বিজিবি ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গুলি করছিল। কোন দিক থেকে গুলি এসে বুকে লাগে বুঝতে পারিনি। তখন পাশ থেকে কেউ একজন বলে ভাইয়ের গুলি লাগছে, ভাইকে ধর। সঙ্গে সঙ্গে বুক থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। তখন অন্যরা পাশে এমজেড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

‘অবস্থা খারাপ থাকায় ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা না পেয়ে মামাতো ভাই লিমনসহ অন্যরা আমাকে ধানমন্ডি হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। পরে আমার অফিসের (পালমাল গ্রুপ) সহায়তায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসক

বলে আমার স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হয়েছে। সে কারণে বুক থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। ১৮ দিন এভারকেয়ারে চিকিৎসা নিই। এতে ছয় লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সম্পূর্ণ টাকা আমার কোম্পানি দেয়।’

আনোয়ার জানান, অবস্থার অবনতি হলে এক সপ্তাহ পর ১১ আগস্ট আবার ঢাকা মেডিক্যালে গেলেও ভর্তি নেয়নি। সারা দিন হাসপাতালের বাইরে শুইয়ে থাকি। পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্ররা হাসপাতালে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে ভর্তি করায়। ৬ মাস ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিই। এর পর চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২২ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্ত্রীও হাসপাতালে থাকায় এক বছর পড়াশোনা করতে পারেনি।

আক্ষেপ করে আনোয়ার বলেন, এখনও প্রসাব-পায়খানার বেগ বুঝি না, পা নাড়াতে পারি না, নিজে নিজে বিছানায় এপাশ-ওপাশ হতে পারি না, কারও সাপোর্ট ছাড়া বসতেও পারি না। এমন অবস্থায় দূতাবাস আমাকে বাংলাদেশে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসার মাঝপথে রিলিজের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, এটা আপনাদের অ্যাম্বাসি জানে। আর অ্যাম্বাসি বলে, চিকিৎসক জানে। তারা আমাকে ৩১ জুলাই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। মূলত দূতাবাসের সম্মতি ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে অপারগ।

সরকারের উদ্দেশ্যে আনোয়ার বলেন, আমি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে চাই, আমি নিজে যেন একটু দাঁড়াতে পারি, শুধু এতটুকুই চাই, প্রসাব-পায়খানার অনুভূতি বুঝতে চাই। আমি শুধু আমার চিকিৎসার নিশ্চয়তা চাই।