ল্যাবের এক্স-রে মেশিন খুলে পড়ল রোগীর ওপর, আহত ৩
রোগী ও ল্যাবের স্টাফদের ওপর খুলে পড়ে এক্স-রে মেশিনের স্ট্যান্ডসহ টিউব। এতে রোগীসহ আহত হয় ৩ জন। তবে কোন সান্তনা না দিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন ল্যাব কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরের কেসি গোল্ড টাওয়ারের আরামবাগ ডি-ল্যাব নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে।
ভুক্তভোগী রোগী অন্তরা আক্তার (২৮) রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর গ্রামের ইতালি প্রবাসী আনোয়ার মোল্লার স্ত্রী। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় অন্তরার স্বজনদের সঙ্গেও অসদাচরণ করার অভিযোগ উঠেছে ল্যাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ক্লিনিক ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, পরিবারসহ ইউরোপের দেশ ইতালিতে থাকেন অন্তরা। দুই মাস আগে দুই ছেলে নিয়ে দেশে আসেন তিনি। পরে কোমড়ে ব্যথার সমস্যার জন্য খালাতো বোন তানিয়া তাকে টেকেরহাটের আরামবাগ ডি-ল্যাব নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে যান। সেখানে ডা. গোলাম সরোয়ারকে দেখালে তিনি এক্স-রে করাতে বলেন। এ সময় ওই ক্লিনিকের এক্স-রে রুমে গিয়ে ট্রেতে সোয়ার কিছুক্ষণ পরই তার ওপর খুলে পড়ে এক্স-রে মেশিনের স্ট্যান্ডসহ টিউব। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ওই ক্লিনিকের আরও দুইজন স্টাফ আহত হয়। এর মধ্যে একজন স্টাফের মাথা গুরুতর জখম হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় অন্তরার ঘাড়ে আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, এ মারাত্মক ঘটনা মোবাইল ফোনে স্বজনদের জানালে অন্তরার খালাতো বোন তানিয়ার সঙ্গেও অসদাচরণ করেছে ক্লিনিক কতৃপক্ষ।
আহত অন্তরা আক্তারের খালাতো বোন প্রত্যক্ষদর্শী তানিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ইতালি প্রবাসী খালাতো বোনের কোমড়ে ব্যথা। এজন্য তাকে নিয়ে আমি টেকেরহাটের আরামবাগ ডি-ল্যাবে ডাক্তার দেখাতে আসি। পরে ডা. গোলাম সরোয়ারকে দেখালে তিনি এক্স-রে করাতে বলেন। এ সময় এক্স-রে রুমে গিয়ে এক্স-রে টেবিলে শোয়ার পরপরই মেশিনটি খুলে অন্তরার ওপর পড়ে। তখন হাসপাতালের দুইজন স্টাফ ভেঙে পড়া মেশিনটি ধরতে গিয়ে আহত হয়। আমিও রুমের ভিতরে ছিলাম, আমিও সামান্য আহত হয়েছি। এ ঘটনা আমাদের লোকজনকে জানালে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন হাসপাতালের লোকজন। আমরা এ ঘটনার সুস্থ বিচার চাই।’
আরামবাগ ডি-ল্যাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদ ফরাজী অকপটে নিজেদের দায় স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ভুল আছে বলেই সবার এতো কথা চুপচাপ শুনছি। টেকনিশিয়ানরা ঠিক মতো ফিটিং করতে পারেনিন বলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তার (অন্তরা) বেশি কিছু হয়নি। আমাদের স্টাফরা ফেরাতে গিয়ে বেশি আহত হয়েছেন। মহিলা মানুষ তাই ব্যথা সহ্য করতে পারেন নাই। তবে ডাক্তার দেখানোসহ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শামীম আক্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের রিপোর্ট করব। এছাড়াও অনিবন্ধিত, অবৈধ ও দুর্নীতি করে পরিচালিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’