সরাসরি এএসআই নিয়োগে প্রবিধান সংশোধন হচ্ছে

শাহজাহান আকন্দ শুভ
২৪ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সরাসরি এএসআই নিয়োগে প্রবিধান সংশোধন হচ্ছে

পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে এএসআই পদে ৮ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। আর এই পদে নিয়োগ দিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত এবং সরাসরি এএসআই পদে নিয়োগ পদ্ধতি প্রচলন করতে ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধানের ৭৪৩ নম্বর বিধি সংশোধনের প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র বলেছে, পুলিশ প্রবিধান ৭৪৩/এ বিধিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশের (এসপি) কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে এসপি অথবা সমপদমর্যাদার

কর্মকর্তার কথা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে। অন্যদিকে নিয়োগ পদ্ধতিতে বিদ্যমান প্রবিধানে শুধু পুলিশ কনস্টেবলের কথা বলা হয়েছে। তাই প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নতুন সৃষ্টি করা অ্যাসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর অব পুলিশ (এএসআই) শব্দ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর এএসআই পদে সরাসরি ৫০ শতাংশ নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশ কনস্টেবল ও নায়েক পদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রবিধানে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স সর্বনিম্ন ১৯ এবং সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে চাকরিতে সর্বনিম্ন পদে প্রবেশের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ ২২ বছর করার কথা বলা হয়েছে।

বিদ্যমান প্রবিধানে আবেদনকারীকে সিভিল সার্জনের মেডিক্যাল সনদ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রবিধানে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন অথবা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ঢাকার সুপারিনটেনডেন্ট থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ফিট সনদ নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

বিদ্যমান প্রবিধানে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্রিকুলেশন অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রবিধানে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ন (জিপিএ ৩.৫) হতে হবে। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৩.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে পুলিশ কনস্টেবল এবং নায়েক পদ পুলিশের মোট সাংগঠনিক কাঠামোয় মঞ্জুরীকৃত পদ থেকে বিলুপ্ত করতে চায়। এ ছাড়া ক্যাডেট এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি চালু হলে ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) পদেও সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এসআই (নিরস্ত্র) পদটি শতভাগ পদোন্নতিযোগ্য পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৩টি গ্রেডের অধীনে ৪টি পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ম গ্রেডে এএসপি পদে মঞ্জুরীকৃত পদের ৬৭ শতাংশ পদে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট ৩৩ শতাংশ পদ ইন্সপেক্টর পদে হতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এসআই (নিরস্ত্র) (গ্রেড-১০) পদ বাংলাদেশে পুলিশ মঞ্জুরীকৃত এসআই (নিরস্ত্র) পদের ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ পদ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দশম গ্রেডের সার্জেন্ট পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ১৭তম গ্রেডে কনস্টেবল পদ বাংলাদেশ পুলিশের মঞ্জুরীকৃত পদ হিসাবে শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। আর এএসআই পদটি বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে।

পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশ সদর দপ্তর নতুন যে ৮ হাজার এএসআই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে এবং ৫০ শতাংশ পদ নায়েক বা কনস্টেবল হতে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলেছে।