চট্টগ্রাম স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দুয়ার: নাহিদ ইসলাম
চট্টগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দুয়ার। এখান থেকে ১৯৭১ সালে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
রবিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে এনসিপির সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পদযাত্রা শুরু করে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা ষোলশহরে দুই নম্বর গেইট মোড়ের বিপ্লব উদ্যানে জনসভায় যোগ দেন।
নাহিদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নগরী। যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে আসছে চট্টগ্রাম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও প্রতিরোধের দুর্গ হিসেবে গড়ে উঠেছিল এখানে। সিপাহী বিপ্লবে হাবিলদার রজব আলীর কথা জানি। সূর্যসেন, প্রীতিলতার কথা জানি। আমরা জানি ১৯৭১ সালে এ চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিল। চট্টগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দুয়ার।’
চট্টগ্রামকে ইসলামের প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ চট্টগ্রাম নগরী ও বন্দর দিয়ে আরব বণিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম এসেছিল। ইসলাম সাম্য ইনসাফ ও মানবতার বার্তা নিয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, বিস্তৃতি লাভ করেছিল। চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষার নগরী। এ চট্টগ্রামে বহু জাতি, সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করে আসছে। বাংলাদেশের একমাত্র কসমোপলিটন নগরী হচ্ছে এ চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন‘ এ চট্টগ্রাম।’
চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘গুটিকয়েক মাফিয়ার কাছে চট্টগ্রামকে আর ছেড়ে দেবো না। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বসবাসকারী সব মানুষ তার ন্যায্য অধিকার পাবে। চট্টগ্রামকে আমরা বহু ভাষা, বহু ধর্ম বহু সংস্কৃতির নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নানা পরাশক্তি চট্টগ্রাম নিয়ে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই চট্টগ্রাম জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। চট্টগ্রাম সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। যদি কেউ চট্টগ্রামের দিকে চোখ তুলে তাকায়, সমগ্র বাংলাদেশে একসঙ্গে প্রতিরোধ করা হবে।’
চট্টগ্রামকে অর্থনীতির লাইফলাইন উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা রয়েছে। পানির ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। লুটতরাজ, মাফিয়া শক্তির কারণে বেহালদশা। এ চট্টগ্রামকে নতুন করে সাজাতে হবে। অর্থনীতির লাইফলাইন এ চট্টগ্রাম। এনসিপি চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষকে বিল্ডিং, ব্রিজ, কালভার্ট দেখিয়ে টাকা-পয়সা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতিটি পয়সার হিসাব জনগণের কাছে উন্মোচন করতে হবে। নতুন বাংলাদেশে কেউ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে পার পাবে না।’
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ যথেষ্ট সাহসী ও বিপ্লবী। তরুণ প্রজন্ম হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছে। এখন আমাদের নীতিনির্ভর রাষ্ট্র লাগবে, ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র লাগবে। আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশ কারো বাপের না। এ দেশ জনতার। বাংলাদেশ যখন পথ হারায়, চট্টগ্রাম তখন প্রতিরোধ করে। তরুণরা রুখে দাঁড়ালে ইতিহাস তৈরি হয়। যেভাবে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সেটাই প্রমাণ করেছে।’
এতে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।