প্রেসার গ্রুপ থাকতে পারে, তবে কাউকে আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য

বদিউল আলম মজুমদার
২১ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রেসার গ্রুপ থাকতে পারে, তবে কাউকে আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য

ড. বদিউল আলম মজুমদার, ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক। বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ‘সুজন’। ড. বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। আমাদের সময়ের সঙ্গে সংস্কার, নির্বাচন, মব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রণজিৎ সরকার

আমাদের সময় : নির্বাচন কমিশনের সংস্কার নিয়ে আপনার লড়াই দীর্ঘদিনের। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সংস্কারের কাজে আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে এখন পর্যন্ত কতটুকু সফল হলেন?

বদিউল আলম মজুমদার : গত কয়েক যুগের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বর্তমান সরকারের অনুরোধে আমিসহ আটজন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে কাজ করেছি। আটজন মিলে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে দুই শতাধিক সুপারিশ করেছি। আমরা যে সুপারিশগুলো করেছি, সেগুলো যুগোপযোগী এবং বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। এগুলো আমরা প্রণয়ন করেছি অনেক মানুষের মতামতের ভিত্তিতে। আমরা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়েছি, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। জনগণের মতামত ও কমিশনের সদস্যদের প্রজ্ঞার ভিত্তিতে আমরা একগুচ্ছ সুপারিশ তৈরি করেছি। এখন এগুলো কতটুকু কার্যকর হলো, তা নির্ভর করবে এগুলোর প্রয়োগের ওপর। এই প্রয়োগের ব্যাপারটা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। এই সুপারিশগুলোর প্রয়োগ নির্ভর করবে বহুলাংশে নির্বাচন কমিশনের ওপর। আর কিছুটা সরকার, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের ওপর। নির্বাচনে অনেক অংশীজন রয়েছে, এটা তাদের সবার ওপরও নির্ভর করে। এখন সংস্কার তথা প্রস্তাবগুলো কতটুকু কার্যকর, কতগুলো যুগোপযোগী এবং এর ফলাফল কতটুকু ইতিবাচক, তা প্রয়োগের ওপর নির্ভর করবে।

আমাদের সময় : এই সংস্কার রাজনৈতিক অঙ্গনকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে কতটা ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন?

বদিউল আলম মজুমদার : আমাদের নির্বাচনী অঙ্গনে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা মতবিনিময় করেছি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে। আমরা সুপারিশ করেছি প্রার্থীরা যে নির্বাচনী ব্যয় করবেন, সেগুলোর হিসাব-নিকাশ নির্বাচন কমিশন যেন অডিট করে। এর মাধ্যমে আমরা নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা চাই অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি, যেমন- চিহ্নিত অপরাধী ও দুর্নীতিবাজরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। শুধু নির্বাচনী অঙ্গন নয়, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বহু অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি, যেমন- চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও দাগি আসামি রয়েছে, যারা বিভিন্নভাবে অন্যায় ও লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত। আমরা চেষ্টা করেছি এসব ব্যক্তিকে কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দূরে রাখা যায়, সে বিধান করতে। রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য কেবল দুর্বৃত্তদের দূর করলেই হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। সর্বস্তরে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তারা যেন দলের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে দলের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছি আমরা। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভোটের মাধ্যমে যেন কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছি আমরা। যাতে দলগুলোতে গণতন্ত্র চর্চা, আর্থিক স্বচ্ছতা, কর্মীদের কাছে দলের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়; একই সঙ্গে দুর্বৃত্ত ও সাজাপ্রাপ্তদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দূরে রাখা হয়।

আমাদের সময় : ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এই সংস্কার মানবে কি? আপনার কী মনে হয়?

বদিউল আলম মজুমদার : তারা কতটুকু মানবে, এটা তাদের ওপর নির্ভর করে। তবে না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। সে রকম যদি ব্যবস্থা থাকে, সেভাবে তা প্রয়োগ করা হবে। ফলে দুর্বৃত্তরা নির্বাচনী অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবে না, তারা অযোগ্য হবে। কেউ অযোগ্য হয়ে যদি মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে, তা হলে তো আমাদের সুপারিশ প্রয়োগ হলো না। প্রয়োগের কর্তৃপক্ষ হলো মূলত নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো। প্রয়োগের ওপর নির্ভর করবে- এটা কার্যকর হবে কি না।

আমাদের সময় : তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপনিসহ চারজন আদালতে রিট করেছিলেন। এরই মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এলে কি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে মনে করেন?

বদিউল আলম মজুমদার : অনেক দেশে যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের অধীনেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটা হয়নি দুর্ভাগ্যবশত। হয়নি বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে। আওয়ামী লীগ ওই সময় অন্য সব রাজনৈতিক দল নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। বিএনপি প্রথম দিকে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটা দাবি করার এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে উপলব্ধি হলো- নির্বাচনের সময় যে সরকারই থাকুক, সে সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয়, সে সরকার যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তা হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ফলে নির্বাচন কমিশনসহ যারা অংশীজন আছে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। নির্বাচনের সময় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সরকার যদি না থাকে, তা হলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে, সে রকম কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হয় না, সে উপলব্ধি থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখন হাইকোর্ট কর্তৃক পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এসেছে এবং সুপ্রিমকোর্টে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত মামলায় আমরা রিভিউ করেছি। আশা করি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে- এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

আমাদের সময় : তা হলে কি আশা করতে পারি আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে?

বদিউল আলম মজুমদার : এই নির্বাচন তো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে। এটা বৈধ সরকার। তবে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে নিঃসন্দেহে। এই অন্তর্বর্তী সরকার দলীয় সরকার নয়। এটি নির্দলীয় সরকার, নিরপেক্ষ সরকার। আমি আশা করি, তারা সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। যদি সঠিকভাবে হয়, তা হলে তারা সবার প্রশংসা পাবে।

আমাদের সময় : দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো আসলে কেমন চলছে? এবং সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত?

বদিউল আলম মজুমদার : আমাদের তো সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। শেখ হাসিনার আমলে যে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখনও বিরাজমান। হাসিনা পালিয়েছেন, কিন্তু যে ব্যবস্থা, যে প্রতিষ্ঠান, যে পদ্ধতি-প্রক্রিয়া, আইনি কাঠামো তাকে দানব করে তুলেছে, সে কাঠামো এখনও বহুলাংশে বিরাজমান। এখন এই কাঠামোগুলো দূর করা সহজ নয়। এগুলোর শিকড় অনেক গভীরে। এগুলো দূর করার জন্য সবার সদিচ্ছা লাগবে। আশা করি, ভবিষ্যতের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এবার অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবে।

আমাদের সময় : রাজনীতির নানা পটপরিবর্তনের এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যায়ে কি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে? আপনি কী মনে করেন?

বদিউল আলম মজুমদার : এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। সরকার তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

আমাদের সময় : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও কেএম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বদিউল আলম মজুমদার : তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার তারা হতেই পারেন। তবে গ্রেপ্তার না করেও তাদের সমন দিয়ে জেলে প্রেরণ করা যেত। এটা দুঃখজনক, বিশেষত নূরুল হুদার প্রতি যে অসদাচরণ করা হয়েছে। তা খুবই অসম্মানজনক, সেটা চরম নিন্দনীয়। এভাবে হওয়া উচিত ছিল না। তবে যারা এগুলো করছে, সরকার যেন তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করে। কেউ অন্যায় করলে, আইনি প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে তারা শাস্তি পাক; কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

আমাদের সময় : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনকে কি যথেষ্ট শক্তিশালী ও স্বাধীন মনে করছেন আপনি?

বদিউল আলম মজুমদার : এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দুরূহ। আমি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। সিইসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তো বলছেন নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন। আমি আশাবাদী হতে চাই- তারা সফল হবেন। আমাদের সবার স্বার্থে, তাদের স্বার্থে নয়, জাতির স্বার্থে তারা সফল হবেন।

বদিউল আলম মজুমদার : সুশাসনের জন্য কাজ করছেন আপনারা। সুশাসন থেকে বাংলাদেশ কত দূরে?

বদিউল আলম মজুমদার : আমাদের তো সুশাসন ছিল না, ছিল দুঃশাসন। ছিল ব্যাপক দমন-পীড়ন, ব্যাপক দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, মানুষের অধিকার হরণ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানুষে মানুষে অসমতা- যা হাসিনার আমলে চরম আকার ধারণ করেছে। শাসনব্যবস্থার এই যে ভেঙে পড়া ব্যবস্থা, এটাকে জোড়া লাগানো সহজ কাজ নয়। আমাদের পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে গিয়েছিল। সব জায়গায় ছিল দলীয়করণ। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারেনি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। শেখ হাসিনা বিতাড়িত হয়েছেন, কিন্তু সবকিছু রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু সরকার চেষ্টা করছে। আমি বলব না সরকার সব কাজে সফল হয়েছে। সরকারের অনেক ব্যর্থতা আছে; কিন্তু সরকার চেষ্টা করছে। সবকিছু ঠিক করার জন্য কিন্তু সরকারের ওপর নির্ভর করলে হবে না, এটি আমাদের সবার ওপর নির্ভর করে। আমাদের নাগরিকদের আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক উত্তরণ- তার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। তার মাধ্যমে সুশাসনের পথ সুগম হবে। সবাই যদি সহায়তা করে তা হলে এটা সম্ভব।

আমাদের সময় : মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারপক্ষের কেউ কেউ বলছেন- বিক্ষুব্ধ জনতার মব নয়, এটি ‘প্রেসার গ্রুপ’। আপনি কী মনে করেন?

বদিউল আলম মজুমদার : ‘প্রেসার গ্রুপ’ তো থাকতেই পারে। তারা কোনো কিছু দাবি করতে পারে, কিন্তু আক্রমণ করা, হেনস্তা করা- এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। আমি আগেই বলেছি- এগুলো আইনের শাসনের পরিপন্থি। স্মরণ করা যেতে পারে যে, হাসিনার আমলেও মব সন্ত্রাস ছিল।

আমাদের সময় : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় এক বছরের ব্যর্থতা ও দুর্বলতার দিকগুলো যদি বলতেন...

বদিউল আলম মজুমদার : ভঙ্গুর অবস্থা থেকে সরকার আমাদের নির্বাচনীব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, পুলিশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইত্যাদি জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। আমাদের অনেক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক। পুলিশেরও বিরাট অংশ পালিয়ে গিয়েছিল, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এই শূন্যতা দূর করা সহজ নয়। ভাঙা অতি সহজ, গড়া কঠিন। বিদ্যমান ভঙ্গুর অবস্থা- এটাকে জোড়া লাগানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে। আমাদের তো এখন আকাশচুম্বী আকাক্সক্ষা। সরকার অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করছে, আবার ব্যর্থতাও আছে। জাতীয় ঐক্য দিন দিন শিথিল হচ্ছে। ঐক্যের বদলে কিছু ক্ষেত্রে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। এটা সরকারের ব্যর্থতা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না। এটা আমাদের বিরাজমান অবস্থার প্রকাশ। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। তবে আমরা সবাই যদি সহযোগিতা করি, তাহলে সরকার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এরপরও সরকার যেখানে সফল হচ্ছে না, ব্যর্থতা প্রদর্শন করছে, সেগুলোর ব্যাপারে দায়িত্ব হবে আমাদের কণ্ঠকে উচ্চকিত করা। বিশেষ করে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সহায়তা করে, তা হলে সরকার সফল হবে। ঐক্য, যেটা বিরাজমান ছিল, তারা সেটা ভেঙে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তখন সরকারের পক্ষে পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানো দুরূহ হবে। আগেই বলেছি, সরকারের সফলতা আছে, ব্যর্থতা আছে; কিন্তু এই সরকারকে সফল হতে হবে। কারণ, এ সরকার আমাদের সবার সরকার। এ সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। এই সরকার সফল হলে আমরা সফল। এই সরকার সফল হলে দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং আমাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ সুগম হবে। তাই আমাদের সবারই এগিয়ে আসা দরকার, যাতে সরকার সফল হয় এবং কতগুলো সংস্কার শেষে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়।

আমাদের সময় : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

বদিউল আলম মজুমদার : ধন্যবাদ