ওসিসহ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় আটকে রেখে চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ
বরিশালে একজন বিকাশ ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে রেখে চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন থানার ওসি মিজানুর রহমান, তদন্ত ওসি শেখ মিজানুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন এবং দুই কনস্টেবল।
আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম স্বপন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগটি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে মাইনুল ইসলাম স্বপন জানান, বরিশাল নগরীর বাংলা বাজার এলাকার একজন বিকাশ ব্যবসায়ী তিনি। বিএমপির গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত কনস্টেবল রাশেদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তার কাছ থেকে ব্যবসার প্রয়োজনে মাসে ২১ হাজার টাকা লাভের বিনিময়ে ২০২৩ সালের ২ মার্চ ৭ লাখ টাকা ধার নেন।
ধারের টাকার জামানত হিসাবে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় কনস্টেবল রাশেদ। লাভের টাকার পাশাপাশি ধারের টাকা পরিশোধ করে দেন ব্যবসায়ী স্বপন। এক পর্যায়ে তার ধার ও লাভের টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। কিন্তু টাকা পরিশোধ হয়ে গেলেও জামানত হিসাবে রাখা চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত দেয়নি কনস্টেবল রাশেদ।
ডকুমেন্টস ফেরত না দিয়ে উল্টো স্বপনের কাছে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলার হুমকি দেন রাশেদ। ব্যবসায়ী স্বপন ৪ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কনস্টেবল রাশেদের স্ত্রী ফারজানা বেগমকে বাদী করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় স্বপনের নামে অভিযোগ দেয়।
লিখিত বক্তব্যে স্বপন আরও জানান, অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন বিষয়টি সমঝোতার জন্য স্বপনকে থানায় ডাকলে গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় থানায় যান। থানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন কিছু না জেনেই তার কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ এবং যাবতীয় সব কিছু রেখে রুমে আটকে রাখে। এ সময় তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন ওসি তদন্ত শেখ মিজানুর রহমান। তার ওপরে চাপ প্রয়োগ করেন এবং মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়ার হুমকি দেন।
একপর্যায়ে স্বপনের বৃদ্ধ মাকে থানায় ডেকে আনা হয় এবং তাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকার চেক ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন তারা। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন নিজে চেক লিখে তার মায়ের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়।
স্বপন বলেন, ‘কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান ও তদন্ত ওসি শেখ মিজানুর রহমান ৬ ঘণ্টা আমাকে আটকে রেখে তাদের পুলিশ সদস্য রাশেদের পক্ষ নিয়ে আমার কাছ থেকে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রেখে ছেড়ে দেয়। তাদের দাবি করা টাকা পরিশোধ না করলে মামলার হুমকি দেন।’
এ বিষয়ে কনস্টেবল রাশেদ জানান, মাইনুল ইসলাম স্বপন একজন ধুরন্দার স্বভাবের লোক। সম্পর্কের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধের আগেই প্রতারণা শুরু করেছে। তার পরিবারের লোকজনকে তার প্রতারণার প্রমাণ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই নিজেরাই বাকী টাকার চেক ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প দিয়েছে।’
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এক ব্যক্তি অর্থ লেনদেন ছিল। দুইপক্ষকে ডেকে বলেছি নিজেরা বসে মিমাংসার জন্য। উভয়পক্ষ বসেই মিমাংসা করেছে। এখানে কাউকে আটকে রেখে চেক ও স্টাম্পে স্বাক্ষর আদায়ের ঘটনা ঘটেনি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’