এবার প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চায় বাংলাদেশ টিম

আবু আলী
২০ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
এবার প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চায় বাংলাদেশ টিম

শুল্কহার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে দেরি করেছিল বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশের বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ নিতেও সময় নেয় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশটির সঙ্গে এখনও শুল্ক চুক্তি করতে না পারার বড় কারণ সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই আলোচনা শুরু করেছিল সরকার। এ অবস্থায় ঘাটতি পুষিয়ে তৃতীয় দফায় আলোচনা করতে তোড়জোড় শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্কহার অনেক কমেছে, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য অস্বস্তি ডেকে এনেছে। এ অবস্থায় তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

ব্যবসায়ী ও গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শুল্কহার কমানো নিয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষির নেতৃত্বে থাকার কথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথমে যারা নেতৃত্ব দেন, তারা আলোচনাকে একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তী সময় আলোচনা, দর-কষাকষি ও চুক্তি করার মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেই ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে সক্রিয়ভাবে আলোচনা করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করছে, সেসব কোম্পানির মতামত নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে সব বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাই ওই সব মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার আরও বৈঠক করে দেশের অবস্থান চূড়ান্ত করে একটি খসড়া যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে ঢাকা। তার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় দফা দর-কষাকষি হওয়ার কথা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজ রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে মার্কিন সরকারের শুল্কমুক্ত প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া চুক্তির খসড়ার ওপর বাংলাদেশ মতামত দেওয়ার পর ইউএসটিআর থেকে বাংলাদেশকে নেগোসিয়েশনের সময়সূচি জানাবে। তবে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, আগামী ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিমান টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে জবাব পাঠানো হবে।

প্রতিযোগীদের কম শুল্কই বড় চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি শুল্ক বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য অস্বস্তি ডেকে এনেছে। নতুন শুল্ক কাঠামো কার্যকর হওয়ার আগেই বেশ কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রপ্তানি আদেশ স্থগিত করেছে। বাড়তি শুল্কের ভার ভাগাভাগি করে নিতে চাপ দিয়েছে কোনো কোনো ক্রেতা। তবে ব্র্যান্ড ক্রেতাদের এসব পদক্ষেপের চেয়ে প্রতিযোগী দেশের পণ্যে বাংলাদেশের তুলনায় কম শুল্ক আরোপই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপসহ বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছিল, তাতে বাংলাদেশ খুব বেশি চিন্তিত ছিল না। কারণ, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছিল। এতে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফার আলোচনার শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হঠাৎ করেই ঘোষণা দেন যে ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে, যেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দোনেশিয়ার ওপরও প্রথমে ৩২ শতাংশ শুল্কারোপ করার পর তা কমিয়ে ১৯ শতাংশ নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া প্রতিযোগী ভারতের ওপর আরোপিত শুল্কহারও ২৬ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশের নিচে নামতে পারে ভারতে অবস্থানরত ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের থেকে ধারণা পেয়েছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, নতুন শুল্কহার কার্যকর হলে ভারতের কাছে এ মর্যাদা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশকে টপকে তৃতীয় স্থানে চলে আসতে পারে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও বড় ব্যবধান তৈরি হতে পারে। নতুন কাঠামোতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনায় এ দেশ দুটির শুল্কভার কম। বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারে প্রধান রপ্তানিকারক চীনও।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের পণ্যে শুল্কের হার ২০ শতাংশের নিচে নামতে পারে। এ ছাড়া চুক্তির আওতায় দুই দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য অনুকূল করতে চলমান আলোচনা অব্যাহত রাখার সুযোগ পাবে। চূড়ান্ত চুক্তির আগে ভারত অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির সুযোগ পাবে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রথম যে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেন, সেখানে ভারতের শুল্কহার নির্ধারণ করা হয় ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া চূড়ান্ত চুক্তির অংশ হিসেবে উভয় পক্ষের মধ্যে শুল্কহার নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। এতে আগামীতে শুল্কহার আরও কমলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ১৪টি বোয়িং উড়োজাহাজ এবং প্রায় ৩ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে সরকার।