নুহাশপল্লীতে শব্দে-গল্পে-স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ
বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রাণপুরুষ, কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে তার প্রিয় স্থান গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। আজ শনিবার দিনব্যাপী এই আয়োজনে অংশ নেন তার পরিবারের সদস্য, ভক্ত এবং নুহাশ পল্লীর কর্মীরা।
এদিন সকালে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে লিচু তলায় হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ স্বজন ও নুহাশ পল্লীর কর্মীরা। কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ যেসব কাজ করে গেছেন সেটা সেভাবেই রাখা আমাদের কর্তব্য। তিনি নুহাশ পল্লীতে দেশীয় সব জাতের গাছ লাগিয়েছেন। বিদেশ থেকেও গাছ এনে লাগাতেন। আমরা প্রতিবছর এখানে নতুন নতুন গাছ লাগাই।’
স্মৃতিস্তম্ভ নয় হৃদয়ে স্মৃতি ধারণ করতে হবে জানিয়ে শাওন বলেন, ‘হুমায়ন আহমেদের অসংখ্য পাঠক ও ভক্ত তার স্মৃতি বুকে ধারণ করে আছেন। অনেকে হুমায়ূন আহমেদে স্মুতি যাদুঘরের কথা বলেন। নুহাশ পল্লী এখনো যাদুঘর করার সামর্থ হয়ে উঠেনি।’
পেঙ্গুইন পাবলিকেশন্স হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন ছিলো, তার লেখা পেঙ্গুইন পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হবে। আমরা সম্প্রতি পেঙ্গুইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এখন থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হবে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
নুহাশ পল্লীর তত্বাবধায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারো হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলেন- হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআনখানি, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের সঙ্গে বাবার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত।’
এ সময় হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত, অনুরাগী গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয় নুহাশ পল্লীর লিচু বাগানে। তার সমাধিস্থল এখন কেবল একটি কবর নয়, হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের জন্য এক স্মৃতির কেন্দ্রস্থল।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বরে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবার নাম ফয়েজুর রহমান, মা আয়েশা ফয়েজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার লেখালেখি শুরু।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কথাসাহিত্যকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে যাত্রা শুরু করে তিনি লিখেছেন শতাধিক উপন্যাস, অসংখ্য ছোটগল্প, নাটক, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও আত্মজৈবনিক রচনা। তার সৃষ্টি হিমু, মিসির আলি, ও শুভ্র— বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
টেলিভিশন নাটকে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’ এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক দিয়ে তিনি দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল ও সমালোচকদের প্রশংসিত। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, ঘেটুপুত্র কমলা— প্রতিটি ছবিই হয়েছে আলোচিত ও দর্শকপ্রিয়। তার অনেক চলচ্চিত্রই পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধির স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪ সালে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ ভূষিত হয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননায়।