‘জিয়াউর রহমানের জন্মই হয়েছিল আ. লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য’

নওগাঁ প্রতিনিধি
১৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৮
শেয়ার :
‘জিয়াউর রহমানের জন্মই হয়েছিল আ. লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমানের জন্মই হয়েছিল আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। হাজার চেষ্টা করেও কেউ বিএনপিকে হারাতে পারেনি। এখনো পারবেনা। দেশে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট করতে হবে। গণতন্ত্র জনগণ ও রাজনীতিবিদদের হাতে দিতে হবে। এ সরকারের সফলতা তখনই যতক্ষণ না একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে।’

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এই কথা বলেন।

আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয় দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতনের এক বছর হয়ে গেল এখনো দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পায়নি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ১৭ বছর এদেশে রাজত্ব করে আমাদের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিতাড়িত হলেও স্বৈরাচারের অঙ্গ পতঙ্গ এখনো দেশে রয়ে গেছে। প্রশাসনসহ তারাই বিভিন্ন জায়গায় বসে দেশ চালাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলছি তাদেরকে এভাবে রেখে এ সরকার সফল হবে না। এদেরকে দায়িত্ব রেখে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আসবে সেটি চিন্তা করা যায় না। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় অরজগতা সৃষ্টি করে তারা প্রমাণ করতে চাচ্ছে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এটি একটি ষড়যন্ত্র।’

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিএনপির ভয়ে ভোট দিত না। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর যখন দেশের জনগণ এমনকি সব রাজনৈতিক দল বলে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে তখন বিএনপি যেন ক্ষমতায় যেতে না পারে সেজন্য ভোট দেয়া যাবে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার চিন্তা আর এখনকার চিন্তা মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশ চালাতে পারলে সীমান্ত রক্ষা, অনুপ্রবেশ ঠেকানো, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা, বেকার সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু আপনার ঢাকা শহরে ট্রাফিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন না দেশ চালাবে কেমনে।’

আব্দুস সালাম বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে এক করতে চায় তারাই দেশের ষড়যন্ত্রকারী। তারাই ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন পিছিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি রাজনীতির মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে এখনো করছে। গণতন্ত্র জন্য বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারপরও আমরা ধৈর্য ধরে আছি। আজকে অনেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মিলাতে চান। বিএনপি আর আওয়ামীলীগ এক না। যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে।’

নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারও কারণে দলের দুর্নাম হয় এমন কাজ করবে না। যারা অন্যায়-অপকর্ম করছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আবারও আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনে জিততেও হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন আমরা তার। নওগাঁয় প্রত্যেকটা সিট ধানের শীষের প্রার্থীকে জেতাতে হবে।’

এর আগে বিকেলে ৪টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আলিম। বিশেষ বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও মান্দা উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি এম এ মতিন। সদ্য বিলুপ্ত মান্দা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।

এছাড়াও কাউন্সিল পূর্বে কাউন্সিলরদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সভাপতি পদে এম এ মতিন ও শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এম এ মতিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক। শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। সাংগঠনিক দুটি পদে প্রত্যক্ষ ভোটে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন সামসুল আলম বাদল ও বিশ্বজিৎ সরকার। ১৪টি ইউনিয়নে মোট ৯৯৪জন কাউন্সিলের মধ্যে ৯৩০জন ভোট দেন।