ঐক্য টেকাতে না পারলে শহিদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে
ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চট্টগ্রাম মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে কালো ব্যাজ ধারণ ও মৌন মিছিল কর্মসূচির পালন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমেদ সড়কে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি নুর আহমেদ সড়ক থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মৌন মিছিলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন, যা পুরো নগরজুড়ে গণআন্দোলনের আবহ সৃষ্টি করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ছিল এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। যারা তখন বুকের রক্ত দিয়ে শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা কোনো দল-মতের জন্য নয়, দেশের মানুষের অধিকার ও ভবিষ্যতের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আজ, সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে আমরা যদি তাদের চেতনা ও ঐক্য ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সেটা হবে সরাসরি বেঈমানি।’
তিনি বলেন, ‘আজ যখন আবারও দেশে একদলীয় শাসনের নতুন ছক আঁকা হচ্ছে, তখন আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে একটি মহল ভিত্তিহীন অজুহাতে আবারও একটি প্রহসনের নির্বাচন সাজাতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— জনগণকে বাইরে রেখে, শহিদদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এই দেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না।’
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করে না। আমাদের রাজনীতি দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য। শহিদদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, সন্ত্রাসমুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি বদ্ধপরিকর। শহিদদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি শহিদ পরিবারের পাশে থাকবে। ’
শহিদদের হত্যার বিচার এখনো না হওয়াকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই বিচার আদায় করাই হবে বিএনপির আগামী দিনের প্রধান লক্ষ্য।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেনব, ‘জুলাই বিপ্লব আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সাহসী অধ্যায়, যেখানে ছাত্র ও জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল। এই আন্দোলনের শহিদরা ছিলেন জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধা, কিন্তু আজও তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই।’
সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান বলেন, ‘আজকে এই দুঃসহ সময়েও যারা শহিদদের কথা স্মরণ করছেন, তাদেরকেই দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে হবে। শহিদদের রক্ত শুধু স্মৃতির অংশ নয়— এটি আমাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা, নৈতিক অনুপ্রেরণা।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এম এ নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, শওকত আজম খাজা, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আহামেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, শিহাব উদ্দিন মুবিন ও মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।