দুবাইয়ে বিমানের চাকা ফাটল, দুর্ভোগে ২২০ যাত্রী

গোলাম সাত্তার রনি
১৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
দুবাইয়ে বিমানের চাকা ফাটল, দুর্ভোগে ২২০ যাত্রী

যান্ত্রিক ত্রুটি পিছু ছাড়ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। একের পর এক দুর্ঘটনা ও ত্রুটিতে বিঘি্নত হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন ফ্লাইট পরিচালনা। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এয়ারলাইনসটির। দেশি-বিদেশি যাত্রীদের কাছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইনসের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে নিয়মিত যাত্রী।

সর্বশেষ ঘটনায় গত বুধবার রাতে দুবাই বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং সিরিজের একটি উড়োজাহাজের চাকা ফেটে ফ্লাইট বিঘিœত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফ্লাইটটি দুবাই থেকে ছাড়েনি। এতে ফ্লাইটটির যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

দুবাই বিমানবন্দর ও বিমান সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটায় দুবাই থেকে ঢাকা ছেড়ে আসার কথা ছিল বিমানের বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজের এস২-এজেডএসের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটের। উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে দুবাই বিমানবন্দরে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই অবতরণ করে। যাত্রীরাও নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে পার্কিং স্ট্যান্ডে উড়োজাহাজটি পার্কিং করার পর।

দেখা যায়, উড়োজাহাজটির মেইন হুইল (চাকা) ফেটে গেছে, যা প্রতিস্থাপন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। স্থানীয়ভাবে অন্য এয়ারলাইনসগুলোর কাছে সন্ধান করেও চাকা না পাওয়ায় বিপাকে পড়ে বিমান কর্তৃপক্ষ। শিডিউল ফ্লাইট বাধাগ্রস্ত হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই ফ্লাইটের ২২০ যাত্রী। বিমানের কর্মকর্তারা বার বার ঢাকায় অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার আহ্বান জানান। কিন্তু উড়োজাহাজ স্বল্পতায় তা সম্ভব হয়নি। পরে যাত্রীদের বুঝিয়ে স্থানীয় একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার উড়োজাহাজের জন্য হুইল পাঠানো হয়েছে। সেটি প্রতিস্থাপন করার পর ফ্লাইট পরিচালনা করে শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় শাহজালালে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সব রুটে পর্যাপ্ত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না বিমান। এর পেছনে প্রধান বাধা সংস্থাটির উড়োজাহাজের স্বল্পতা। এই সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে উড়োজাহাজে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা। এতে বিমানের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

গত ২৭ জুন বিমানের থাইল্যান্ডগামী ফ্লাইট বিজি৩৮৮ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস নিতে গেলে যাত্রীদের জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইট এক ঘণ্টা দেরিতে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে। কিন্তু প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে বিকাল ৪টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকা ত্যাগ করে।

গত ৫ জুলাই ব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের বিজি৩৮৯ ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে বিমানের কর্মকর্তারা যাত্রীদের জানান, ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের পরদিন একই সময়ে ফিরতে হবে। তবে কোনো কারণ উল্লেখ করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।

একই দিন মদিনা থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি১৩৮ সকাল সাড়ে ৯টায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের পর রানওয়ে-২৩ প্রান্তে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকা পড়ে।

এর আগে ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার একটি ড্যাস৮ বিমান ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের পর রানওয়েতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে যায়। পরে পুশ কার্ট দিয়ে টেনে ৬ নম্বর বেতে নেওয়া হয়। পরের দিন মেরামত করার পর সেটা ঢাকায় আসে। নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার লক হয়ে যাওয়াসহ আরও কিছু যান্ত্রিক ক্রুটি পাওয়া যায় বিমানটিতে।

এর আগে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিমানের ফ্লাইট বিজি-৪৩৬ (এস২-এজেডব্লিউ) উড্ডয়নের পর পেছনের একটি চাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিচে পড়ে যায়। এমন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝেমধ্যেই বিঘিœত হচ্ছে ফ্লাইট। এর সাথে যোগ হয়েছে উড়োজাহাজ সংকট। এই সংকটের কারণে বিদ্যমান রুটে শিডিউল ফ্লাইট চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে অনেক রুটে ফ্লাইট কমিয়েছে সংস্থাটি।

দুবাই বিমানবন্দরের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম রওশন কবীর আমাদের সময়কে বলেন, হুইল ফেটে যাওয়ায় শিডিউল ফ্লাইট পরিচলনা করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার নিয়মিত ফ্লাইটে ওই উড়োজাহাজের জন্য হুইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা স্থাপন করে শুক্রবার (আজ) দুপুর আড়াইটায় ফ্লাইটটি শাহজালালে অবতরণের কথা রয়েছে। যাত্রীদের হোটেলে রাখা হয়েছে। অনেক সময় তাপমাত্রার কারণে হুইল ফেটে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।