প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে শ্রমবাজার

আরিফুজ্জামান মামুন
১৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে শ্রমবাজার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১১ আগস্ট মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। তিন দিনের এই সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সফরে আলোচনায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করা এবং অভিবাসন, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু অগ্রাধিকার পাবে।

এই সফরের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দুই দেশের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে এবং আরও বাংলাদেশি আটকের সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে এবং প্রধান উপদেষ্টার সফরে এ বিষয় আলোচনায় আসবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১২ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। দুই দেশের সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে এই বৈঠকে। জানা গেছে, এই বৈঠকে বিনিয়োগ, শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ বিনিময় সম্পর্কিত একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যু এ বৈঠকে এজেন্ডা হিসেবে না থাকলেও যদি মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সে বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হয়, তাহলে আলোচনা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বহুদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত বছরের অক্টোবরে আনোয়ার ইব্রাহিম ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন, যা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের ঢাকা সফর। সেই সফরেই দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন, শিল্প সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং প্রতিরক্ষা কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এবারের সফরে সেই আলোচনাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা চালু, বৈধ শ্রমিক নিয়োগে স্বচ্ছতা, কর্মীদের সুরক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চায়। শ্রমবাজারে জটিলতা ও অবৈধ দালাল চক্রের অপতৎপরতা বন্ধে উভয় দেশের মধ্যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে আলোচনা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা কামনা করছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নানা আলোচনায় মালয়েশিয়া ইতিপূর্বে রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ড. ইউনূসের সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সদস্যপদ লাভের জন্য মালয়েশিয়ার সমর্থন চায় বাংলাদশে। বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধও সফরের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হতে পারে। মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের লেনদেন যাতে স্বচ্ছ ও নিরাপদ থাকে, সেজন্য নতুন নিয়মনীতি প্রণয়ন এবং যৌথ পর্যবেক্ষণ কাঠামো গঠনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

অন্যদিকে, নিরাপত্তা ইস্যুতে মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমন্বয় এবং আটক ব্যক্তিদের সুষ্ঠু আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান প্রধান উপদেষ্ট পরিষ্কার করবেন বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, আটকরা যেন ন্যায়বিচার পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাজউদ্দীন পরিবারের সাক্ষাৎ: মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাজউদ্দীন পরিবার। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন তাজউদ্দীনের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ এবং পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় শারমিন আহমদের লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ বইয়ের একটি কপি প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দেওয়া হয়।