জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে যা বললেন ববি হাজ্জাজ
বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার কূটকৌশল পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে মাঠে নামতে উৎসাহ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত জরুরি সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘পরাজিত আওয়ামী শক্তির যে আস্ফালন আমরা গতকাল গোপালগঞ্জে দেখেছি তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। সরকারের ব্যর্থতা এবং এনসিপি নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক অপরিপক্কতা, সবমিলিয়ে গতকালের ঘটনায় পুরো জাতির কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ এবং পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমাদের সুপারিশ নিয়েই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ পর্যন্ত দেশের মানুষের সবচেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। একটি দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের পরিবেশের ওপরেই নির্ভর করে। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের রেখে যাওয়া দলীয় ক্যাডার নির্ভর প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ৫ আগষ্ট পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। তবে সরকার প্রশাসনকে আওয়ামীমুক্ত করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই বলেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে “বিদ্রোহ” হয়েছিল। ’
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নৈতিক মনোবল বৃদ্ধি এবং বাহিনীগুলোর অভ্যন্তরে কোনো শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হয় নাই বলেই সারাদেশে ঢিমেতালে তাদের কার্যক্রম চলছে। সর্ষের ভিতর “ভূত” রেখে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘গোপালগঞ্জে শুরু থেকেই পতিত এবং পরাজিত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা স্বক্রিয় ছিল। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়িবহরে হামলা করে স্থানীয় একজন নেতাকে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটলেও আমরা কোনো “ক্রাকডাউন” পরিচালিত হতে দেখি নাই। ’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জের পরিচিত আওয়ামী ক্যাডাররা কার প্রশ্রয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমরা তা জানতে চাই। হাসিনা পালানোর পরেরদিন থেকেই ফেসবুক লাইভে হুমকি দেওয়া, ১৫ আগস্ট প্রকাশ্যে মিছিল করা, বারবার গোপালগঞ্জে লাঠিসোটা নিয়ে শো-ডাউন করা, সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দেওয়ার পরেও কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তার করা হয় নাই বরং গত জুন মাসে ভারতে ভ্রমণ করতে যাওয়ায়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে।’
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, বারবার সরকারকে বলার পরেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীরা কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না? গোপালগঞ্জের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য জেলাগুলোতেও যদি পরাজিত আওয়ামী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায় তার দায় কে নিবে? ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এনসিপির নেতৃবৃন্দের ওপর নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এ রকম কিছু ঘটনার জন্য কিছুটা সুযোগ প্রশাসন করে দিয়েছে কিনা আমরা জানতে চাই। “মার্চ টু গোপালগঞ্জ” কর্মসূচি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ানো হলেও দিনের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। নির্জন যে স্থানে প্রথম পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয় জায়গাটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মাত্র ৩-৪ জন পুলিশ সদস্যসহ একটি মাত্র পুলিশের গাড়ি টহলে ছিল। ’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘এনসিপির সমাবেশস্থলে প্রথমে হামলার সময় পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো অ্যাকশনে যায় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নাজুক অবস্থান দেখে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা উৎসাহ পেয়ে কয়েক গুণ শক্তি বৃদ্ধি করে রাস্তায় নেমে আসে। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের একটি লক্ষ্য এক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হলেও আমরা আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর নতুনরূপে ফিরে আসার ঘটনায় মর্মাহত। অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে আমরা আইনের আওতায় দেখতে চাই।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, ‘মিটফোর্ডের ঘটনায় আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছি। মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করে এই ঘটনাকে কেন্দ্র একটি দলের নামে ঢালাওভাবে নোংরা কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে। গণঅভ্যুথানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে একটি মহল পরিষ্কার ষড়যন্ত্র শুরু করছে। এই ষড়যন্ত্রে কেউ বাতাস করছে আবার কেউ নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা পাল্লায় মেপে ওজন করছে। ’
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘হাসিনা পতনের যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার কূটকৌশল পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে মাঠে নামতে উৎসাহ দিচ্ছে। পরিস্থিত এমন চলতে থাকলে দেশের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কুচক্রী মহল প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবেই রাজনীতিতে এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দেশব্যাপী কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী ক্যাডারদের গ্রেপ্তার করতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হোক। প্রয়োজনে অবসরে যাওয়া বিতর্কমুক্ত পুলিশ সদস্যদের সাময়িকভাবে কাজে লাগানো হোক। যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট আওয়ামী আনুগত্যের প্রমাণ আছে অবিলম্বে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হোক। একইসাথে আমাদের প্রধান দাবি, অবিলম্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। দেশ যতদ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত উন্নতি হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন উদ্যোগ না থাকায় আমরা হতাশা প্রকাশ করছি। একইসাথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের কুসুম কুসুম অবস্থান নিয়েও আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল তারা কতজন এবং কীভাবে জামিন পেয়ে বেরিয়ে গেছে, আমরা সেটাও পরিষ্কার জানতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে এই সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি এবং আমরা আশা করব সরকার আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে। গতবছর জুলাই মাসে যে ঐক্য আমরা দেখেছিলাম সরকারের কিছু ব্যক্তির কারণে সেই ঐক্যে যাতে আর ফাটল না ধরে আমরা সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করছি। আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত আগামী রমজান শুরুর আগেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ুন পারভেজ খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।