ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ আবার বেড়েছে

জিয়াদুল ইসলাম
১৭ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ আবার বেড়েছে

ব্যাংকের বাইরে আবার নগদ অর্থ বেড়েছে। গত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। মে মাসে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা এপ্রিলে ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমলেও এক মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না। তবে সুদের হার বৃদ্ধি, সুশাসন ফেরানোসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতিক পদক্ষেপে আমানত পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানান, মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল কোরবানির ঈদ। পশু কেনাসহ বাড়তি খরচের জন্য ওই মাসে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছিল। আর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার জন্য উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আস্থা সংকট ও বেসরকারি খাতে ঋণের ধীরগতিকে দায়ী করেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে, যা নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সামনে আসে। এতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ফলে ওইসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলার চাপ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। যদিও গত সেপ্টেম্বর থেকে সেই প্রবণতা কমতে থাকে এবং হাতে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে। তবে দুই ঈদের আগে (মার্চ এবং মে) বাড়তি খরচের জন্য নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, মে মাস শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা এপ্রিলে ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে নগদ টাকা বেড়েছে ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। রোজার ঈদের কারণে গত মার্চে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তার আগে টানা ছয় মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ কমেছিল। তবে তা ছিল খুবই কম, ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। রোজার ঈদ পরবর্তী মাস এপ্রিলে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ কমেছিল ১৯ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ১১ মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। কারণ, ব্যাংকের বাইরে থাকলে টাকার হাতবদল হওয়া কমে যায়, যা দিনশেষে ‘মানি ক্রিয়েশন’ কমিয়ে দেয়। আর ব্যাংকে ফিরলে একদিকে যেমন ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়, অন্যদিকে ঋণ দেওয়ার তহবিল বাড়ে। এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী : গত মে মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা এপ্রিলে ছিল ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এপ্রিলে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। তার আগের মাস মার্চে ব্যাংকগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা আমানত বেড়েছিল। তবে এক মাসের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ বাড়লেও বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে। এপ্রিলে আমানত বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল আরও কম, মাত্র ১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সিপিডির রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কম। যখন উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন কোম্পানি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমাবে তখন আমানতের প্রবৃদ্ধিও কমবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মে মাসে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এই নিয়ে টানা সাত মাস বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার বিষয়ে মে মাসে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলার পাচার হওয়ার কারণেই সেই পরিমাণ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে চলে গেছে। তাতে টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ দিয়েও আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারছে না।