কোরআনের ভাস্কর্য স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সরানোয় ক্ষোভ

রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
১৬ জুলাই ২০২৫, ১৪:২১
শেয়ার :
কোরআনের ভাস্কর্য স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সরানোয় ক্ষোভ

ঝালকাঠির রাজাপুরে প্রেসক্লাব চত্বরে মুসলিম জনতার উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সরিয়ে সেই স্থানে কোরআনের ভাস্কর্য (নাসবুল কুরআন) নির্মাণ করা হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে এ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় মুসলিম জনতা এতে অংশ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন সোমবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেতাকর্মীরা এবং উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম মৃধার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের আংশিক ভাঙা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলে জায়গাটি পরিস্কার করে সেখানে কোরআন চত্বর লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। 

এ ঘটনা জানাজানি হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষাকারী মহল এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়। অনেকেই এই মুহূর্তে সামনে আসতে না চাইলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা এটি।’ 

তবে মুসলিম জনতার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভাস্কর্যটি ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকায় সেটি সরিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফের আদলে নতুন ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এক কমান্ডার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আমাদের চেতনার প্রতীক। এটি সরিয়ে নতুন কিছু নির্মাণ করা অত্যন্ত দঃখজনক ও উদ্বেগজনক। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর বিএনপির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহজাহন ওমর বীরউত্তম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরে তার নির্দেশে এবং এডিপির অর্থায়নে রাজাপুর উপজেলা সদরের প্রেসক্লাব চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়।

এরপর ২০২৪ সালে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সারাদেশে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু হয়। সেই সময় রাজাপুরেও আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়।

উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য হিসেবে কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া ছিল না। মানুষ এটাকে মুর্তি মনে করতেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট এটা ভেঙে ফেলা হয়, তখন থেকে জায়গাটা নোংরা দেখাচ্ছিল। আমরা সেটা পরিস্কার করতে গিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে কোরআনে ভাস্কর্য নির্মাণের প্রস্তাব আসে। সেই থেকে ইউএনওর সঙ্গে মৌখিক কথা বলে কোরআনের ভাস্কর্য নির্মাণ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

উপজেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম এর আমির মাওলানা কবির হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় কোনো লোক ঘটনাস্থলে ছিল না। এটা ছাত্রজনতা করেছে। আমরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তা দেখে সমর্থন জানিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেছি।’

উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. রফিক হোসেন মৃধা বলেন, ‘গত ৩০ জুন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার সময় থাকলেও এটা থেকে আমি বের হয়ে গেছি। পরে কি হয়েছে জানিনা।’

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহুল চন্দ বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

এদিকে পুরো ঘটনাকে ঘিরে এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কোরআন ভাস্কর্য স্থাপনকে সাধুবাদ জানালেও অনেকে এটিকে ইতিহাস বিকৃতি বলে মন্তব্য করছেন।