বাঁধ ভেঙেছে ৪১ স্থানে, পানি বাড়ায় খবর নিতে পারেনি পাউবো
ফেনীতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ৪১ স্থানে বাঁধ ভেঙেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত ৯ জুলাইয়ে নদী ভাঙনের দেখা দিলেও আজ সোমাবার এ তথ্য জানায় পাউবো। এতে সংস্থাটির উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলাকে দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এর জাবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি থাকায় আমরা খবর নিতে পারিনি।’
পরশুরাম উপজেলার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘গত ৯ জুলাইয়ে পরশুরামের কয়টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ হচ্ছে কীভাবে বরাদ্দ দিবে, ঠিকাদার থেকে টাকা নিবে সেই নেশায় থাকে। মানুষের জন্য কাজ করা তাদের উদ্দেশ্য নয়।’
এদকে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলায় ১১২ গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। যতই পানি নামছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন।
ফুলগাজীর আনন্দপুর, দরবারপুর ও মুন্সিরহাট ইউনিয়নে এখনো পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আনন্দপুর ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামে এখনো সড়কে পানি উপচে জমিতে লোকালয় প্লাবিত হতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
একই অবস্থা ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নেও। সেখানে বাড়ি ঘরে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা হাজি নুরুল হক বলেন, ‘খাল দখল, নদী দখল এসবের কারণে পানি নামতে পারছে না। যার কারণে এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। কাতালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে পানি না নামায় স্কুল ছুটে দিয়ে বাড়ি চলে গেছে শিক্ষকরা।’
অথচ ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, ‘কোনো স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।’
পাঠাননগর ইউনিয়নের কাতালিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘পানি সরতে শুরু করলেও ঘরে এখনো থাকার উপযোগী হয়ে উঠেনি। অল্প সময়ের মধ্যে পাকা ঘরগুলো থাকার উপযোগী করতে পারলেও কাচা ঘরগুলোর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও সড়ক ভেঙে যাওয়ায় অনেক পথে চলাচল করা যাচ্ছে না। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরা।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে বন্যায় ৪১টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ২২টি ফুলগাজী উপজেলায় ১৯টি। সব নদীতে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
নদী ভাঙনের খবর দেরিতে জানানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি থাকায় আমরা খবর নিতে পারিনি। এখন পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে খবর নিচ্ছি।’
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ৬৭টি, পরশুরামের ২৭টি, ছাগলনাইয়া ১৫টি, ফেনী সদর একটি ও দাগনভূঞায় দুটি গ্রাম।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এখন পযন্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা যায়নি। সব ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে।’