পঞ্চগড় কারাগারে ২ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৩
পঞ্চগড়ে মির্জা আব্দুল বাকী নামে বাংলাদেশ সচিবালয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জমি দখলের চেষ্টায় জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টায় দায়ের করা মামলায় আদালতে জামিন নিতে গিয়ে আটক হয়েছেন ঢাকা আগারগাঁও পরিবেশ ভবন শাখার অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দিন ও প্রিন্সিপাল অফিসার শাহবুদ্দিন মাহমুদ। বর্তমানে তারা পঞ্চগড় জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) থাকায় বৃহস্পতিবার আটকের পর শুক্রবার কারাগারে গেছেন মো. দিলদার হোসেন নামে পঞ্চগড়ের এক অধ্যক্ষ।
গতকাল শনিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পঞ্চগড়ের কোর্ট ইন্সপেক্টর খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় আদালতে তারা জামিন নিতে এসে আটক হয়েছে।’
আটক ফিরোজ উদ্দিন ঢাকার ঢাকেশ্বরী রোড লালবাগ কেল্লা এলাকার মৃত হাজি মুসলিম উদ্দীনের ছেলে। শাহবুদ্দিন ঢাকার নিউ পল্টন রাখালপারা এলাকার শাহজাহান মাহমুদ ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, চক্রের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর জমি বিভিন্নভাবে দখলের চেষ্টা চালান তারা। এর মাঝে ভুয়া কাগজ তৈরি করে নানা ফন্দি তৈরি করেন। এরপর ভুয়া বায়নামা ও জাল এ্যাফিডেভিট তৈরি করে মির্জা আব্দুল বাকীর নামে পঞ্চগড়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এর মাঝে চক্রটি মির্জা আব্দুল বাকীর নামে অগ্রনী ব্যাংকে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করেন। একই সঙ্গে অর্থ আত্মসাৎ করে ফাঁসাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় চেক পাঠিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এর মাঝে চক্রটি ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বিষয়টি সামনে আসে। পরে বাকী জামিন নিয়ে পঞ্চগড় আদালতে আনোয়ার হোসেন, জিয়াউর রহমান, জসিম উদ্দীন সহ ৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এরপর পঞ্চগড় আদালতে জামিন নিতে গিয়ে ঢাকা আগারগাঁও পরিবেশ ভবন শাখার অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দিন ও প্রিন্সিপাল অফিসার শাহবুদ্দিন মাহমুদ আটক হন। এদিকে গেল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের বিসিক শিল্প নগরী এলাকার বিএম কলেজের এক অধ্যক্ষ মো. দিলদার হোসেন দিলুকে ঢাকার ডিবি (ডিএমপি) পুলিশের একটি টিম রাজধানীর জয়েন্ট কমিশনার এলাকা থেকে আটক করে শুক্রবার পঞ্চগড়ে আনলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও জানা গেছে, অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দিন ও প্রিন্সিপাল অফিসার শাহবুদ্দিন মাহমুদের সহায়তায় ভুয়া একাউন্ট তৈরি করে চক্রের সদস্যরা পঞ্চগড় থেকে শুরু করে ঠাকুরগাও, পাবনা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতারণা করে আসছিলেন। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি রাজশাহী ও পিবিআই ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলা গোয়েন্দা শাখার তদন্তকারী অফিসারের তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমানে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
এ বিষয়ে মামলার বাদি মির্জা আব্দুল বাকী বলেন, ‘মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন ভুয়া চেক নিয়ে পঞ্চগড় সোনালী ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে গেলে ব্যাংক ম্যানেজারের সন্দেহ হয়। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। তাদের একাউন্টির বিষয়ে ভুয়া বলে জানালে চেকটি বাতিল হয়। এরপর একই চেক নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় চক্রটি। যেহেতু আমার সঙ্গে তারা প্রতারণার চেষ্টা করে তাই এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করি।’
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আশিষ কুমার শীল বলেন, ‘অধ্যক্ষ দিলদার হোসেন দিলুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি ছিল। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে ঢাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে শুক্রবার আদালতে তোলা হলে আদালত আসামিকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’