বিবিসি বাংলাকে সিইসি /
‘শাপলা প্রতীক কেউ পাচ্ছে না, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত’
শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বিধিমালায় তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে আবারও ইসির অবস্থান পরিষ্কার করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
আজ রবিবার সিইসির সেই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এতে মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারা, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং নিজের নিরপেক্ষতার প্রশ্নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, অনেকগুলো দল আপনাদের কাছে নিবন্ধন চেয়েছে। প্রায় দেড়শোর মতো। অনেকের সাইনবোর্ডও নাই। ঝড়ে উড়ে গেছে। এই নিবন্ধনের ব্যাপারে আপনারা কী করবেন? নির্বাচনের সময় তো খুব বেশি নেই- এমন এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘আমাদের তো স্ক্রুটিনি (যাচাই বাছাই) শুরু হয়ে গেছে। আমরা সব আবেদন পর্যালোচনা করছি। যাদের যে ডকুমেন্টস শর্ট আছে, যাদের শর্ট আছে তাদেরকে আমরা ১৫ দিন সময় দেব। সময় দেওয়ার পর যারা কন্ডিশন ফুলফিল করবে না তাদের তো আমরা রেজিস্ট্রেশন দিতে পারব না। আইন অনুযায়ী, যে শর্ত আছে সেটা পূরণ করলেই তারা নিবন্ধন পাবে।’
সময় স্বল্পতার বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অসুবিধা নাই, আমাদের তো ফিল্ড অফিস আছে অনেক, ওরাই আমাদের রিপ্রেজেন্ট করে। ৫ হাজার ৭০০ লোক কাজ করে আমাদের ফিল্ডে। তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই অলরেডি শুরু করে দিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসা শুরু করেছে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্কও আছে যেহেতু জাতীয় ফুলও শাপলা। এ বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘বিষয়টা আমরা খুব সিরিয়াসলি বিবেচনা করেছি আমাদের কমিশনে। আমাদের কমিশনের একটা সিদ্ধান্ত হলো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত কনসেনসাস (ঐকমত্য) ছাড়া নেই না। মেজরিটির মতামত নিয়েই করে থাকি। কারও ওপর চাপিয়ে দেই না কোনো কিছু। পাঁচজন মিলেই এই কমিশন। আগে মাহবুব তালুকদার সাহেব একদিকে কথা বলতেন, বাকিরা অন্যদিকে বলতেন। আমাদের এখানে শুনেছেন আমরা দলাদলি করেছি কখনো।’
তিনি বলেন, ‘এই শাপলা নিয়েও আমরা অনেক ইনভেস্টিগেট করেছি, বিষয়টা এক্সামিন করেছি। কিছু আইনি বিষয় আছে এখানে। ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে একটা আইনই আছে। আরেকটা বিষয় আছে এখানে এনসিপি চেয়েছে, এর আগে নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। নাগরিক ঐক্য চেয়েছিল, ৮-১০ দিন আগে নাগরিক ঐক্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের মেইন ফোকাস হলো শাপলা। তারা বলেছে, আমরা শাপলা চেয়েছি আপনারা দেন নাই। আমরা ওদের আবেদন পেন্ডিং রেখেছি। উনারা বললেন যে দেখেন আমরা কিন্তু অনেক আগেই অ্যাপ্লাই করেছি, এনসিপি করেছে পরে। আমি একটা রেজিস্টার্ড দল। এনসিপি রেজিস্ট্রেশনই পায়নি।আমাদের আইন অনুযায়ী, যারা আগে ক্লেম করবে তাদের দিতে হয়, সুতরাং সুযোগটা সীমিত। যদি দিতে হয় তাহলে নাগরিক ঐক্যকে দিতে হবে।’
আগে চেয়েছে তাদেরকে দেবেন? নাকি শাপলা প্রতীক দেবেন না- এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কিছু আইনি ইস্যু আছে তো। এজন্য কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শাপলাকে আমরা প্রতীক হিসেবে রাখব না। এটা কেউ পাচ্ছে না, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
আপনারা জামায়াতকে পূর্ববর্তী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা আপনারা কোন প্রক্রিয়ায় করেছেন। সেটাও তো আপনাদের প্রতীকের তালিকায় ছিল না, বাদ দেওয়া হয়েছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বাদ দেওয়া হয়েছিল তো কোর্টের একটা রায় ছিল তাদের নিবন্ধন বাতিলের জন্য। সম্ভবত ২০১৩ সালে। নিবন্ধন বাতিল প্রতীকসহ হয়েছিল। তখন এটাকে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন আমরা অ্যাপিলেট ডিভিশনের জাজমেন্ট পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্ডারে উনাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছি, যখন কোনো পার্টিকে রেজিস্ট্রেশন দেই তখন রেজিস্ট্রেশন প্লাস প্রতীক দিতে হয়। সুতারং ওনাদের যখন সার্টিফিকেট দিতে হয়, তখন ওখানে কিন্তু প্রতীকসহই ছিল এবং স্ট্যাটাস কো যখন হয়েছে তখন প্রতীকসহই স্ট্যাটাস কো হয়েছে।’
সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব।’