বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্বাসনে ৭ দাবি ঢাকাস্থ ফেনীবাসীর
ফেনী ও পাশের জেলাগুলোতে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের সৃষ্ট বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে অবিলম্বে সুস্পষ্ট রোড ম্যাপের দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ ফেনীবাসী নামের একটি নাগরিক সংগঠন। দাবি মানা না হলে ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ঢাকায় অবস্থানরত ফেনীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরা এতে বক্তব্য দেন।
ব্যবসায়ী ও ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজামুদ্দিন, হাবের পরিচালক ও দাগনভুঁইয়া উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, ফেনী ফোরামের সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসাইন ও এডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটওয়ারি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন মনি, পরশুরাম ফোরামের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, শ্রমিক দল নেতা আব্দুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানি, ছাগলনাইয়া ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন ভুঁইয়া, মনিপুর স্কুলের শিক্ষক, রিয়াজুদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহ সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরুদ্দিন প্রমুখ।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত সরকার ফেনীর প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করেছে, তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা দুর্গত এলাকা সফরে যাওয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
একইসঙ্গে মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, অবিলম্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা চায়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারের ঘোষণা না এলে ফেনীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন বলেন, মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না, আর যেন যখন তখন বন্যায় না ডুবে তার ব্যবস্থা চাই।
সভাপতির বক্তব্যে দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, পানি সম্পদ উপদেষ্টা ও তার মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের নামে বিপুল অংকের টাকার অপচয় এবং দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপদেষ্টা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে স্থায়ী বন্যা প্রতিরক্ষা ও ক্ষতিপূরণের রোডম্যাপ না হলে অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
দাবিসমূহ
১. বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে উজানের পানি এসে ভাটি এলাকার বন্যার কারণ না হয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
২. ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ এই অঞ্চলের মানুষের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের রক্ষাকবচ বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুননির্মাণ করতে হবে।
৩. এই এলাকার শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানি নিষ্কাশন লাইন তৈরি, নদী খনন ও যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. ২৪শের বন্যার পরে অন্তর্বর্তী সরকার ১০০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় খরচ হয়েছে বা কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। একইসাথে গতবার ও এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, ফসল, গবাদি পশু, মৎস খামারের সঠিক তথ্য যাচাই করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন তলা ভবন নির্মাণ করতে হবে যাতে করে বন্যার সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৬. পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধ মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ ব্যহত হয়েছে। যেসব বাঁধ মেরামত হয়েছে সেগুলোও ছয় মাস না যেতে ফাটলের মুখে পড়েছে। এসব কর্মকাণ্ড তদন্ত করে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৭. ফেনীসহ এই অঞ্চলের মানুষ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের শিকার। এর বিরুদ্ধে যথাযথ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেয়া বন্ধ করতে হবে।