চারজনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপির ৩ সংগঠন, পুলিশ বলছে ‘পরিচয় মেলেনি’
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার নেতাকর্মীকে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আজীবন বহিষ্কার করলেও পুলিশ বলছে, জড়িত আসামিদের এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম।
তিনি বলেন, ‘একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কারা এটা করেছে এবং কারা অপরাধী— এই দিকটি বিবেচনায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমরা তাদের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। তারা কেন এই অপরাধ করেছে, সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
মোহাম্মদ জসীম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখছি, এ ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জড়িয়ে আসামিদের পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি- তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না বা তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেননি।’
এদিকে, সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকিকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে আসামি কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠন থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে। আর ছাত্রদলও অপু দাস নামের একজনকে বহিষ্কার করেছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বহিষ্কারের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপির এ ডিসি বলেন, ‘যুবদল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অঙ্গসংগঠন। তারা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এজহারনামীয় দেখেছে কি না বা কোন বিবেচনায় তাদের বহিষ্কার করেছে, সেটা তারা ভালো বলতে পারবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে মামলা তদন্ত করতে চাই না। এটা একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা মানুষকে আলোড়িত করেছে। আমরা এ অপরাধের মোটিভ কী সেটা দেখতে চাই। রাজনৈতিক বিষয়টি মুখ্য নয়। তবে যদি কোনো কারণে এটা চলে আসে অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।’
সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোহাম্মদ জসীম বলেন, গত ৯ জুলাই বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানাধীন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের তিন নম্বর গেইটে এবং সংলগ্ন এলাকায় একটা হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, ‘ঘটনার নেপথ্যে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জেনেছি, ওই এলাকায় একটি ভাঙারি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসাথে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন এবং এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’
ডিসি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার নিহত সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করি। এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।’