ভাটারা থানায় পুলিশ হেফাজতে বিষপান করা সেই নারীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ জুলাই ২০২৫, ০০:৪৩
শেয়ার :
ভাটারা থানায় পুলিশ হেফাজতে বিষপান করা সেই নারীর মৃত্যু

রাজধানীর ভাটারা থানায় পুলিশ হেফাজতে বিষপান করা ফিরোজা আশরাফী নামের সেই নারী মারা গেছেন। স্বামীর গোপনাঙ্গ কাটার অভিযোগে আটকের পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষপান করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান ফিরোজা।

এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ভাটারা থানার তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল হোসেন, কনস্টেবল শারমিন ও নাছিমা।

ভাটারা থানা পুলিশ জানায়, ফিরোজা আশরাফীর সঙ্গে তার স্বামী ইসমাঈল সুজনের দাম্পত্য কলহ চলছিল। আশরাফী ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন; তার স্বামী থাকেন পল্লবী এলাকায়। বৃহস্পতিবার ভোরে আশরাফী ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে দেন এবং পরে নিজেই তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হয় সুজনের স্বজনরা। সেখানে আশরাফীর সঙ্গে সুজনের স্বজনদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফিরোজাকে সুজনের স্বজনরা আটক করে ৯৯৯ নম্বরে কল দেয়। পুরুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনাস্থল পল্লবী এলাকায় হওয়ায় পল্লবী থানা থেকেও ফিরোজাকে আটক করার বার্তা পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ভাটারা থানা-পুলিশের একটি দল হাসপাতাল থেকে ওই নারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল ভাটারা থানায় এলাকায় না হওয়ায় ওই নারীকে থানার হাজতে না রেখে, থানার নারী ও শিশু ডেস্কের সামনে দুই নারী কনস্টেবলে পাহারায় বসিয়ে রাখা হয়।

তবে আগে থেকেই অনলাইন থেকে কেনা বিষ ওই নারী বাসায় থাকা ইনহেলারে লুকিয়ে রেখেছিলেন- এই তথ্য জানতেন না দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। বৃহষ্পতিবার বিকেলে থানায় বসা অবস্থায় আশরাফী শ্বাসকষ্টের কথা বললে ‘লিগ্যাল এইড’ সংগঠনের সহায়তায় তার বাসা থেকে সেই ইনহেলার আনা হয়। ওষুধ সেবনের কথা বলে কৌশলে ইনহেলারের প্যাকেটের ভেতরে থাকা বিষপান করেন ফিরোজা।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে রাতে ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার ফিরোজাকে থানায় আনার পর পল্লবী থানা পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছে; ফিরোজাকে থানা পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এরই মাঝে ঘটে যায় বিষপানের ঘটনা। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় ওই নারীর বিরুদ্ধে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ আইনে একটি মামলা রুজু হয়েছিল। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ফিরোজার অনলাইনের মাধ্যমে বিষ কেনার সেই নম্বর ও বিষ কেনার কথোপকথনের প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষ বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।