উড়োজাহাজ সংকটে বৈশ্বিক বাজার হারানোর শঙ্কা
আকাশপথে বিমানের যাত্রী সংখ্যা কমছে। কমছে রুটও। রয়েছে উড়োজাহাজ সংকট। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারের যাত্রী হারানোর শঙ্কায় আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সর্বশেষ গত ১ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট। মাত্র দেড় বছরের মাথায় রুটটি বন্ধ হয়ে গেছে। উড়োজাহাজের স্বল্পতা ও বাণিজ্যিক কারণ দেখিয়ে ফ্লাইটটি বন্ধ করেছে বিমান। আবার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অনেক রুটে যাত্রী পরিবহন করতে পারছে না সংস্থাটি।
জাপানের নারিতা ফ্লাইট বন্ধের কারণ প্রসঙ্গে এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. শাফিকুর রহমান বলেছেন, প্রতি ফ্লাইটে বিমানের ৯৫ লাখ টাকা লোকসান হয়। এভাবে তো আর লোকসান দেওয়া উচিত নয়। সে কারণে আপাতত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান পর্ষদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক দিকে ক্রমাগত লোকসান, সেই সঙ্গে উড়োজাহাজ ও ক্রু স্বল্পতা। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ২২৫টি ফ্লাইটের মাধ্যমে ৮৪ হাজার ৬৭৪ যাত্রী ও ২৩৬৫ টন কার্গো পরিবহন করে বিমান। এতে কেবিন ফ্যাক্টর ছিল শতকরা ৬৯ ভাগ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা প্রতি ফ্লাইটে গড়ে ৯৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিমানের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নারিতায় সপ্তাহে দুটো ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়ে সেই ফ্লাইট দিয়ে ঢাকা-মাস্কাট, ঢাকা-দাম্মাম ও মদিনায় অতিরিক্ত একটি করে ফ্লাইট চালালে লাভ হবে মাসিক ৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই একটি রুট বন্ধ করা হলে অন্য তিনটি রুটকে আরও লাভজনক করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারিতা রুটে ফ্লাইট চালু করেছিল বিমান। এর আগে ১৯৮০ সালের ২৫ মে প্রথমবারের মতো ঢাকা-নারিতা রুটে ফ্লাইট চালু করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা। পরে কয়েক দফা চালু ও বন্ধের মুখে পড়ে। ২০০৬ সালে রুটটি একবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, বিমান বহরে এখন ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে। উড়োজাহাজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে; কিন্তু সিন্ডিকেট জটিলতায় তা আটকে ছিল। সরাসরি উৎস থেকে বিমান লিজ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের আগে বহরে দুটো নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিমান রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে ইয়াঙ্গুন, মালে ও নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে চায়। পরের বছর কুনমিং রুটে এবং তার পরের বছর সিডনি, উহান, জাকার্তা ও সিউল রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে সংস্থাটি। এজন্য সরাসরি উৎস থেকে কিছু বিমান লিজ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩২টি আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ও ১৭টি কার্গো উড়োজাহাজে সেবা প্রদান চলছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ভালো খবর হচ্ছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের মুনাফা ৮৩১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক হিসেবে এমন রেকর্ড মুনাফার কথা জানিয়েছে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। হতাশার দিক হচ্ছে, উড়োজাহাজ সংকটে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক রুট চালু করতে পারছে না। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ফ্লাইট বাড়ানো যাচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যের মতো লাভজনক গন্তব্যে।
আগামী ১০ বছরে দেশের আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে বছরে গড়ে ১ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন; ২০৩৫ সালে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৫০ লাখে। বিমান প্রথম উড়োজাহাজ সংকটে পড়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা-টরেন্টো, ঢাকা-নারিতা ও ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালুর মধ্য দিয়ে। এরপর এ বছর হজের আগে এই সংকট আরও তীব্র হয়। হজের আগে বিমান দুটো বোয়িং উড়োজাহাজ লিজে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ জন্য একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও উড়োজাহাজ পাওয়া যায়নি। বিমানের বহরে ছিল ২১টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে দুটো বোয়িং ৭৩৭ লিজের মেয়াদ শেষে বহর থেকে বাদ পড়ায় বর্তমানে ১৯টি। এখন বহরে রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, দুটো বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০।